ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রেমিককে জড়িয়ে ধরে প্রেমিকার বিষপানের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে প্রেমিক সুলতানকে উদ্দেশ্যে করে লিখে গেছেন দুটি প্রেমপত্র।
রোববার এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের দরগা ঈদগাহ মাঠে। সোমবার ওই কিশোরীর দাফন সম্পন্ন হয়।
উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের কালিবাড়ী এলাকার মৃত রুস্তুম আলীর পুত্র আব্দুল কাদির জানান, তার মেয়ে হালিমা খাতুন ২ বছর পূর্বে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে মো. সুলতান মিয়া জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। সুলতান একই ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামের মহর উদ্দিনের পুত্র। পেশায় হ্যান্ডট্রলি চালক।
এ ঘটনায় গৌরীপুর থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার পর পুলিশের সহযোগিতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। তবে কোনো মামলা বা জিডি করেনি। এরপর থেকে ওই মেয়েকে নানাভাবে সুলতান উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বর্তমানে মাইজহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।
আব্দুল কাদির বলেন, ঘটনার দিন রোববার বিকালে আমার মেয়েকে দরগা ঈদগাহ মাঠ এলাকায় নিয়ে যায় সুলতান। সুলতান আমার মেয়েকে মারপিটও করে। এক পর্যায়ে সেখানে ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে যায় আমার মেয়ে হালিমা। গৌরীপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। নেয়ার প্রস্তুতিকালে হাসপাতালের সন্ধ্যা ৬টায় মারা যায়।
গৌরীপুর থানার ওসি খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মচিমহায় প্রেরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যা কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরিবারের নিকট ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হালিমা মৃত্যুর পূর্বে সুলতানকে উদ্দেশ্য করে দুটি প্রেমপত্র লিখে যান। একটি পত্রে প্রিয় সুলতানকে উদ্দেশ্যে করে লেখা হয়েছে ‘আমার অভিশাপ থেকে তোমাকে মুক্তি দিলাম। মন থেকে তোমাকে দেই নাই বিশ্বাস কর। তুমি সবাইকে নিয়ে ভালো থেকো। আর কোনো মেয়ের জীবন নিয়ে প্রেমের অভিনয় করো না। তোমার সামনে যেন আমার মৃত্যু হয়, কিন্তু হলো না। আমার সব স্মৃতি পুড়ে ফেলো।’
অপরপত্রে লিখে যান, ‘আমার আগের চিঠিটা বুঝতে পারছ কি-না। জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে, তাই না! কাল দেখা করতে আর আজ আমি দুনিয়া ছাড়া। কিন্তু বিশ্বাস করো সবকিছু পাঁচ মিনিটে উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। সুলতান আমার একটা কথা রেখো কয়েকদিন পর বিয়ে করে নিও। আমি বলছি তুমি সুখী হবে সে তোমাকে বুঝবে জানবে আমি জানি আমারে ভুলে যেতে কষ্ট হবে তোমার। তবু বলি ভুলে যেও। তোমার সবকিছু প্রমাণ মুছে দিয়ে এসেছি।
পত্রের শেষাংশে লেখা রয়েছে ‘তোমার জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করলাম।’