ময়মনসিংহ জেলা বিএনপিতে মানবিক ইস্যুতেও চলছে বিভেদ বিভক্তি, ঐক্যমতের অভাব। দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় নানা ইস্যুতে ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপির নেতৃত্বের দ্বন্দে নেতাকর্মীরা বিব্রত। একটি মানবিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে লুকানো সেই দ্বন্দ আরো প্রকট হয়ে ফুটে ওঠেছে। সম্প্রতি এ ধরেনর দু’টো ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক অসন্তোষ সৃস্টি হয়েছে।
দলের গুরুত্বপুর্ন নেতারা বলছেন, দলের দুর্দিনে এ ধরনের ঘটনা অনাকাংখিত অনভিপ্রেত।
দু’টো ঘটনার একটি হলো ময়মনসিংহে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের প্রতি সহমর্মিতার ঈস্যুতে নেতৃত্বের বিভক্তি।
দলীয় সুত্র জানায়, ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জনি এবং কোতুয়ালি বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি। তাই তাদের পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও সহমর্মিতা জানাতে যান বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
ঈদের দিন ময়মনসিংহ জেলা বি্এনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মোজাম্মেল হক টুটুসহ কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করে ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। এই গ্রুপটির সাথে দলের সাবেক সাধারন সম্পাদক এবং ২০১৮ সালের জাতিয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর-৪, আসনে দলের নোমিনি ওয়াহাব আকন্দের সু-সম্পর্ক রয়েছে। ওয়াহাব আকন্দ বর্তমানে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। আলমগীর মাহমুদ আলম এর আগে জেলা বিএনপির নির্বাচিত সাংগাঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এর পাল্টা আয়োজনে ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা মোফাখখারুল ইসলাম রানার নেতৃত্বে একটি দল ঈদের পরদিন কারাবন্দি ওই পাচ নেতাদের পরিবারের সাথে সাখ্যাত করেন। এই চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। প্রায় দুইযুগ মুলদলের বাইরে থেকেও ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপিতে যুগ্ম আহবায়কের পদ পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা-৫, আসনে দলের একাধিকবারের নোমিনি মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ময়মনসিংহ দক্ষিন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু গ্রুপের নেতা।
এই মানবিক আয়োজনে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এককভাবে না গিয়ে আলাদাভাবে গেছেন। তাই কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সাথে জেলার নেতৃবৃন্দের বিভক্তির সহর্মিতা প্রকাশে দলের অব্যন্তরে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে আলমগীর মাহমুদ আলম, ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানাসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়কসহ নেতৃবৃন্দ বলেছেন নানা অভিযোগ আর ক্ষোভের কথা ।
জেলা বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেছেন ডা মোফাখারুল ইসলাম রানা, ময়মনসিংহ মেডিকলে কলেজ শাখা ছাত্রদলের রাজনীতে যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় চলে যাওয়ার পর তিনি দলের সাথে কোন সম্পর্কই রাখেন নি। প্রায় দুই যুগ পর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন। দলের প্রতি তার কি কমিটমেন্ট থাকতে পারে, প্রশ্ন করেন তিনি।
জেলার আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেছেন, যখন পুলিশের অনুকম্পা নিয়ে দলের কর্মসুচী পালন করতে হয় তখন দলের মধ্যে এ ধরনের কোঠারি নেতৃত্বের রাজনীতি দলকে আরো ক্ষতির সম্মুখীন করবে।এটা সকলের বোঝা উচিত।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেছেন, দলের মধ্যে সমন্নয়হীনতা আর নেতৃত্বের দ্বন্দের কারনেই এসব হচ্ছে। । এ ধরেনের বিভক্তি সৃষ্টি করাই যদি কারো উদেশ্য হয় তাহলে তিনি বিভক্তির নায়ক হিসেবেই পরিচিতি পাবেন, নেতা হতে পারবেন না।
জেলা বিএনপির আপর যুগ্ম আহ্বায়ক বিষয়টিকে দ্বন্দ বা বিভক্তি হিসেবে না দেখলেও দলের ঐক্যমতের প্রতিফলন তিনি দেখতে পাচ্ছেন না বলে দাবী করেন তিনি।
এ বিষয়ে ডা মোফাখারুল ইসলাম রানা বলেন, কে কি ভাবছে জানিনা, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর ব্যবস্থাপনায় আমরা কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের বাসায় বাসায় যাই। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করেই গিয়েছি।
আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, আমি কোন গ্রুপ করি না। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে ধারাবাহিক কর্মসুচীর অংশ হিসেবেই আমি কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের পরিবারের সাথে দেখা করেছি। রাজনীতিতে নোংরামির পরিবর্তে সৌন্দর্যের বিরোধ বজায় থাকলেই দলের জন্য মঙ্গল।