বাংলা লেখাকে সারাবিশ্বে সহজলভ্য করেও কোনো স্বীকৃতি পেলেন না ডাঃ মেহেদী

১৮ বছর বয়সের বৈপ্লবিক ভাবনাচিন্তা। ১৮ বছর বয়সের সমস্ত এনার্জি, উৎসাহকে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা। অদম্য পরিশ্রমে ওই চার দেওয়ালের মধ্যেই স্বপ্ন সফল। আর এই সব কিছু হল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে পড়তে-পড়তে। এটাই গল্প ডঃ মেহেদী হাসান খানের।

নামের আগে তখনও জোড়েনি ‘ডক্টর’। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র উসকো-খুসকো চেহারার হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল ছেলেটা স্বপ্ন দেখল বাংলা ভাষাকে সারা পৃথিবীর কাছে খুব সহজে পৌঁছে দেওয়ার। কীভাবে সম্ভব সেটা? মেহেদী ভেবে বের করল এর সমাধান। যদি এমন একটা সফ্টওয়্যার বানানো যায়, যাতে ইংলিশ অক্ষরে টাইপ করেই বাংলা লেখা সম্ভব, শুধুমাত্র তা হলেই অনেক মানুষ খুব সহজে টাইপ করে ফেলতে পারবেন বাংলা ফন্টে।দিন-রাত এক করে, খাওয়া-ঘুম ভুলে হস্টেলের ঘরেই একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে শুরু হয়ে গেল মেহেদীর লড়াই। যার ফল? সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি সমস্ত কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ‘অভ্র কিপ্যাড’। তোমরাও অনেকেই ব্যবহার করেছ, এবং করে চলেছ। না করে থাকলেও অন্তত নাম তো শুনেইছ। এই মেহেদী হাসান খানেরই ব্রেন চাইল্ড ‘অভ্র’।

খুব একটা সহজ ছিল না কাজটা, বিশেষ করে মেডিক্যাল পড়তে-পড়তে। শিক্ষকরা একসময় বলে দিয়েছিলেন যে এই ছেলে ডাক্তার হওয়ার অযোগ্য। মেডিকেল কলেজ ছেড়ে দেওয়া উচিত মেহেদীর। হাল ছাড়েনি সে। সত্যি করেছে ‘অভ্র’র স্বপ্নকে, আর সম্মানের সঙ্গে পাশ করেছে ডাক্তারিও। তৈরি করেছে নিজের স্লোগান, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’মেহেদীর এই আবিষ্কারের ফলে কোটি-কোটি টাকা বেঁচেছে সরকারের। সমস্ত সরকারি দপ্তরগুলোতে ব্যবহৃত হয় ‘অভ্র’। লেখা হচ্ছে সরকারি ফাইলে, তৈরি হচ্ছে আমাদের পরিচয়পত্র। আর এত সবের মাঝে সরকার কিন্তু ভুলেই গিয়েছে ‘অভ্র’র জনকের কথা। কারণ? ছেলেটা যে কিছুই চায়নি তার এই আবিষ্কারের পরিবর্তে। না অর্থ, না পরিচিতি। চিরকাল প্রচারবিমুখ, বিনয়ী ছেলেটা তাই এত বড় একটা কাজ করেও রয়ে গেল প্রচারের আলোর বাইরেই। পেল না কোনও সরকারি স্বীকৃতি বা পুরস্কারও।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top