কাজের টানে ঢাকায় এসে তারা ফিরলেন দগ্ধ লাশ হয়ে

ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনের অগ্নিকাণ্ডে নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের খুরুমখালী গ্রামে।

শনিবার সরেজমিন ওই গ্রামের গনি মেম্বারের বাড়ির অলি উল্ল্যার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সর্বত্র সুনশান নীরবতা। বাড়ির প্রবেশ পথেই গোরস্থানে দুটি নতুন কবর। একটি অলিউল্যাহর ও অপরটি তার ভাগ্নে রাসেলের।

অলি উল্যাহর ছোট ছেলে সারাফত উল্ল্যাহ রিয়াদ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা দিকে তার বাবা ও ফুফাতো ভাই রাসেলের মরদেহ বাড়িতে আসে। পরে রাত সাড়ে ১২টায় জানাজা শেষে উভয়কে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রিয়াদ জানান, সর্বশেষ রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে বাড়ি এসেছিলেন তার বাবা। রোজা শুরুর তিনদিন আগে কাজের টানে ঢাকা চলে যান।
শুক্রবার ভোরে সেহরীর সময় অগ্নীকাণ্ডের কিছুক্ষণ পর তারা খবর পান ওই ভবনে আগুন লেগেছে। তার বাবার মোবাইল ফোনে বারবার কল করলেও তা রিসিভ করেননি। তার বাবার মরদেহ সকলের পরে পাওয়া যায়। তাকে মুসা ম্যানসনের ছাদের একটি কক্ষে কবির নামে একজনের সঙ্গে পোড়া অবস্থায় উদ্ধার করে লোকজন।

রিয়াদ জানান, কর্মের টানে তার বাবা অলি উল্ল্যাহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত যান। সেখানে কয়েক বছর চাকরি করার পর ১৯৯২ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় দেশে চলে আসেন। পরে এলাকায় দুবার দোকান দিলেও ব্যবসায় লোকসান গুনে তা বন্ধ করে দেন। প্রায় ৮/১০ বছর আগে তার বোন জামাই দেলোয়ার ও ভাগ্নে রাসেলের সূত্র ধরে ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনে নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি নেন।

অন্যদিকে অলি উল্ল্যার ভাগ্নে রাসেলও গত প্রায় ১১ বছর ধরে মুসা ম্যানসনে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। সর্বশেষ ২০/২২ দিন আগে রাসেল বাড়ি ফেরেন।

এসময় কয়েকদিন থেকে চলে যান। ৫ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে। তার তিন বছর বয়সী রাইসা ও ৬ মাস বয়সী নাফিসা নামে দুইটি মেয়ে রয়েছে।

রাসেলের বাড়িতে গেলে দেখা যায় মৃত্যুর সংবাদ শুনে লোকজন ভিড় করেছে। রাসেলের মা নুরজাহান বেগম ছেলে রাসেল ও ভাই অলি উল্যাহকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে। লোকজন দেখলেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

রাসলের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনের পাশে ছোট দোকান করে বিকিকিনি করতেন। মুসা ম্যানসন তৈরির পর ১১ বছর আগে তিনি অসুস্থতার কারণে মুসা ম্যানসনের মালিক মোস্তাক আহমেদকে ধরে ছেলে রাসেলকে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি দেন। পরে তিনি এলাকায় এসে নিজে বাড়ির সামনে দোকান দিয়ে বসেন।

তিনি বলেন, ছোট ছোট শিশু দুইটি কিভাবে তাদের বাবার অভাব পূরণ করবে। কিভাবে চলবে আমার সংসার। জানি না, পর করুণাময় কেন আমার পরিবারের প্রতি এত নির্দয় হলো।

তিনি জানান, মুসা ম্যানসনে আগুন লাগার পর সেখান থেকে কয়েকজন পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে মোবাইল ফোনে কল করে আগুনের কথা জানান। পরে তিনি রাসেলের মোবাইল ফোলে কল করলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।

Share this post

scroll to top