চিরকুটসহ ধর্ষণে অভিযুক্তদের লাশ, কে মারলো তাদের?

দশদিন আগে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে পিরোজপুরের একটি থানায় মামলা হয়েছিল। শনিবার দুপুরে পাশের উপজেলায় তার লাশ পাওয়া গেছে।

লাশের গলায় বাধা একটি কাগজে লেখা, ‘আমার নাম……মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করার কারণে আমার এই পরিণতি’।

এর আগে গত ১৭ই তারিখে সাভারে আরেকটি ধর্ষণ মামলার আসামীর মৃতদেহ পাওয়া যায়, যার গলাতেও একটি কাগজে লেখা ছিল, ‘আমি ধর্ষণ মামলার মূল হোতা’।

উভয় ঘটনাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন বলে পুলিশ জানালেও, কারা তাদের হত্যা করেছে – তা পুলিশ জানাতে পারেনি।

আসামী নিহত হওয়ার পরে ভয়ে পালাচ্ছেন বাদীরা
ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত একজনের মৃতদেহ পাওয়ার পর হামলার আশংকায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারটি।

অভিযোগ ওঠে, গত ১৪ই জানুয়ারি দুপুরে নানাবাড়ি যাবার পথে গণ ধর্ষণের শিকার হন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার একজন মাদ্রাসা ছাত্রী। তিনদিন পরে ওই ছাত্রীর পিতা প্রতিবেশী এক কিশোর ও একজন যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ধর্ষণের মামলা করেন।

সেই মামলার নিহত যুবকের বাড়ি ছিল ওই ছাত্রীদের বাড়ির কাছেই।

ছাত্রীটির বাবা এবং মামলার বাদী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নানাবাড়ি যাবার পথে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করায় আমি দুইজনকে আসামী করে মামলা করেছি। তাদের একজনকে শনিবার মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে শুনেছি। এরপরে তারা আমাদের সবাইকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, মারধরের চেষ্টা করছে। তারা নাকি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে বলেও বলছে’।

তিনি জানান, হামলার ভয়ে তাদের পরিবারের সবাই এখন অন্যত্র লুকিয়ে আছেন। পুলিশও তাদের নিরাপদে থাকতে বলেছে।

তবে নিহত যুবকের পরিবার ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, তাদের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ এনে এখন ধর্ষণের অভিযোগ দায়েরকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছেন তারা।

নিহত যুবকের চাচা শাহিন জমাদ্দার বলছেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক ….তাকে মারেনি, তাহলে তাকে হত্যা করলো কে? আমরা মনে করি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ওরাই (ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার) তাকে হত্যা করেছে। এখন আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তিনি জানান, ঘটনার পরে ঢাকায় চলে এলেও বুধবার থেকে অভিযুক্ত যুবকটি নিখোঁজ ছিল। সেদিন কয়েক সেকেন্ড পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হলেও পরবর্তীতে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।

মামলায় অভিযুক্ত আরেক কিশোরকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

পুলিশ কী বলছে?
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানায়, ফলে সেই থানাতেও ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।

ভাণ্ডারিয়া থানার ওসি মোঃ শাহাবুদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘গত ১৭ই জানুয়ারিতে আমাদের থানায় দুইজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করেছি, কিন্তু অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।’

‘তবে জানতে পেরেছি, পাশের থানায় একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর বেশি কিছু আমাদের জানা নেই।’

পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি থানার কাঁঠালিয়া থানার ওসি মোঃ এনামুল হক জানান, রাস্তার পাশে মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে একজন যুবকের মৃতদেহ দেখতে পান, যার মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

‘পরে আমরা সনাক্ত করি যে, তিনি পাশের ভাণ্ডারিয়া থানার একটি গণ ধর্ষণ মামলার আসামী।’

তার গলায় বাধা একটি কাগজে লেখা রয়েছে, ‘আমার নাম……মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করার কারণে আমার এই পরিণতি।’

কিন্তু কে বা কারা, কেন তাকে মেরেছে – সে বিষয়ে কোন তথ্য তারা জানতে পারেননি।

সাভার ও কাঁঠালিয়া হত্যাকাণ্ডের মিল
বাংলাদেশে কয়েকশো কিলোমিটার দূরের দুইটি উপজেলায় দশ দিনের ব্যবধানে দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক মিল দেখা গেছে।

দুইক্ষেত্রেই তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। নিহত হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন।

যে উপজেলায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের লাশ পাওয়া গেছে পাশের উপজেলায়। দুইটি মৃতদেহের গলায় ধর্ষণে স্বীকারোক্তিমূলক বার্তা ঝোলানো ছিল।

সাভারের ওসি মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দশদিন আগের ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা নতুন আর কিছু জানতে পারেননি।

‘কারা বা কেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তার কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে’, তিনি বলেন।

কোন বিশেষ গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা সেরকম কোন তথ্য নেই পুলিশের দাবি। আবার এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত কিনা, সেটিও তারা জানাতে পারছেন না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top