রাজধানীর যে কোন রাস্তায় এখন চোখে পরে মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা। আগেও মাঝে মধ্যে এই ধরণের প্রতিযোগীতা দেখা যেত। তবে এখন হার বাড়ছে জ্যামিতিকভাবে। কারণ এই প্রতিযোগীতার সাথে আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রাইড শেয়ারকারীরা । এই অবস্থায় রাইড শেয়ারিং নীতিমালার শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।
অথচ সহজ শর্তে নিবন্ধনের সুযোগ দিলে অভিযোগের সমাধান পাবেন না যাত্রীরা। নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়বে বলে মনে করছেন রাইড শেয়ারিং বিশ্লেষকরা।
এদিকে, ভাড়া নিয়ে ‘জনঅসন্তোষ’ থাকলেও তাতে নজর দেয়নি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। উল্টো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ প্রতিষ্ঠানের দাবি মেনে নীতিমালার শর্ত শিথিলের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠান। নীতিমালার ৬টি শর্ত পাশ কাটিয়ে অ্যাপ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন করাতে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে তারা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগম জানান, রাইড শেয়ারিং নিয়ে বিআরটিএ যেসব প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে তার উপর আলোচনার জন্য স্টেকহোল্ডারদের ডাকা হয়েছে। রোববার সকালেই স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু এ স্টেক হোল্ডার কারা তা তিনি জানাতে পারেননি।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, নীতিমালার ৬টি বিষয় শিথিল করে দিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব গেছে। যার মধ্যে যাত্রীর অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে শিথিল করে দিতে বলা হয়েছে। তবে, এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রী অধিকার নিয়ে সরব এই সংগঠন জানায়, ঢাকায় রাইড শেয়ারিং বেপরোয়া ভাবে চলছে। ঝাঁকে ঝাঁকে মোটরসাইকেল রাস্তায় নেমে এক ধরণের দৌরাত্ম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। সমিতির তথ্যে, গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের দিক দিয়ে মোটরসাইকেল দ্বিতীয়। শতকরা ২৫ দশমিক ৩০ ভাগ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আক্রান্ত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নীতিমালা করার একটা বড় উদ্দেশ্য হলো রাইড শেয়ারিংয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। আর যাত্রীর অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তি করা। কিন্তু বিআরটিএ কেনো এই ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে নিবন্ধন করাতে চাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। মোটরসাইকেলের ভাড়া নিয়ে নীতিমালায় দিক নির্দেশনা নেই। আর ট্যাক্সিক্যাব এসে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়েছে। যা নীতিমালার বিরোধী।
রাইড শেয়ারিং বিশ্লেষক মুরাদ শুভ বলেন, ‘ঢাকায় এখন ট্যাক্সিক্যাব রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এসব ট্যাক্সিক্যাব বিশেষ সুবিধা দিয়ে আমদানি করে আনা হয়েছে। তার জন্য বিআরটি ‘র পৃথক নীতিমালাও রয়েছে। তাতে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়ে চালানোর কোনো বিধান নেই। এটা অবৈধ। অথচ বিআরটিএ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রাজধানীতে দেখা গেছে, ‘পাঠাও কার’ এ যুক্ত হয়ে রাইড শেয়ারিং করছে তমা ট্যাক্সিক্যাব। শতাধিক ট্যাক্সিক্যাবকে পাঠাও তাদের অ্যাপে চালাচ্ছে।
নীতিমালার আরেকটি শর্ত- অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওয়েব পোর্টাল স্থাপন ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ। এ বিষয়ওটি পাশ কাটিয়ে নিবন্ধন দিতে চায় বিআরটিএ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা করলে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। আর অ্যাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ওপর কার্যত বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) ফারুক জানান, নীতিমালা শিথিল নয় আসলে আমরা চাচ্ছি প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধনের মধ্যে আসুক। এই ছয়টি শর্ত মানতে হলে কোন অ্যাপকে এখনো নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। এজন্য একটা সময় বেধে দেওয়া যেতে পারে যে নিবন্ধনের পর এই সময়সীমার মধ্যে তারা শর্ত গুলো মানবে।
নিবন্ধন পেতে এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠান বিআরটিতে আবেদন করেছে। এগুলো হলো, পাঠাও, সহজ লিমিটেড, চালডাল, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেড, গোল্ডেন রেন লিমিটেড, ওভাই সলিউশনস লিমিটেড, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড, রাইডার রাইডশেয়ার এন্টারপ্রাইজ ইনক লিমিটেড, পিকমি লিমিটেড, ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং বাহন প্রাইভেট লিমিটেড।
তবে, ঢাকায় উবার, পাঠাও, সহজ, ওভাই ছাড়া আর তেমন কোনো অ্যাপকে সক্রিয়ভাবে রাইড শেয়ারিংয়ে দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া ‘ওয়েজ’ নামে একটি অ্যাপ কার পোলিং দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে নামতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি। তারা শিগগিরই আবারও নামছে এ সেবায়- এমনটি জানা গেছে।