এগিয়ে যাও নারী, এগিয়ে যাচ্ছে নারী। নানা প্রতিকূলতা, বাধা আর বিড়ম্বনা পেরিয়ে বাংলার নারীরা এগিয়ে চলছে মাথা উঁচু করে। নারীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার সময় এখনই যে নারীদের। নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রের কর্মকান্ডে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নারী জাগরণে এগিয়ে বাংলাদেশ।
নারীরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে? আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সে গল্প শুনব এমন একজন নারীর কাছে, যিনি কর্মক্ষেত্রে বুঝিয়ে দিয়েছেন কিভাবে বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।
তিনি ফিফার সহকারী রেফারি সালমা আক্তার মনি। গত বছর পরীক্ষায় পাশ করেও বয়স কম থাকায় ফিফার সহকারী রেফারি হতে পারেননি। পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ২০২১ সালের জন্য ফিফার সহকারী রেফারি হয়েছেন নেত্রকোনার এ যুবতী।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সালমা আক্তার মনি তার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বললেন ‘সফলতা পেতে প্রথম প্রয়োজন লক্ষ্য, তারপর চেষ্টা ও বিশ্বাস। আমরা এসব ছিল। লক্ষ্য স্থির না করলে কখনওই সেখানে পৌঁছানো যায় না। লক্ষ্য ছিল বলেই অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ আমি ফিফার সহকারী রেফারি।’
‘মেয়েদের প্রতিবন্ধকতা থাকে পায়ে পায়ে। কার্যক্ষেত্র, পরিবার, সমাজ থেকে আসতে পারে নানান প্রতিবন্ধকতা। তবে লক্ষ্যে পৌঁছতে এসব জয় করতে হবে। পরিবারের সহায়তা দরকার হয়, অর্থনৈতিক সহায়তা দরকার পরে। তবে আমি পরিবার থেকে পেয়েছি দারুণ সাপোর্ট। বাবা-মা, ভাইয়ের কেউ আমাকে বাধা দেননি। আমার ভাই অনেক সহযোগিতা করেছেন’- বলছিলেন সালমা আক্তার মনি।
নেত্রকোনার মেয়ে সালমা আক্তার মনি। স্কুল জীবনে খেলতেন অ্যাথলেটিকস, হ্যান্ডবল। অথচ ক্যারিয়ারের বড় অর্জন ফুটবলে। ফিফার সহকারী রেফারি হওয়াটা তো কম কথা নয়!
কিভাবে ক্যারিয়ারের এই বাঁক পরিবর্তন করলেন সালমা আক্তার মনি? আজকের ফিফার সহকারী রেফারি যখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন অ্যাথলেটিকস শেষ করেই নেমে পড়তেন ফুটবল অনুশীলনে। আবার হ্যান্ডবলও খেলতেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের হয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপও খেলেছেন।
যার ফুটবলের গন্ডিটা ছিল কেবল জেলায় সীমাবদ্ধ, সেই সালমা মনি এখন বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফার স্বীকৃত সহকারী রেফারি।
নেত্রকোনা সদরের মো. শহর আলী ও রেখা আক্তার দম্পতির এক পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে সবার ছোট সালমা আক্তার মনি। ব্যবসায়িক বাবা ও গৃহিণী মায়ের ছোট সন্তান সালমা এখন আর শুধু নিজ পরিবারের গর্বই নন, গর্ব পুরো দেশের। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় বড় ম্যাচে পতাকা হাতে তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যে লাল-সবুজের দেশের নামও ছড়িয়ে পড়বে বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে।
ফিফার সহকারী রেফারি হওয়ার পাশপাশি পড়াশোনাও পুরোদমে চালিয়ে গেছেন সালমা। নেত্রকোনা আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে।
লেখাপড়ার পাশপাশি ফুটবল রেফারি হওয়ার জন্য যে পরিশ্রম করে গেছেন মনি তার পূর্ণতাও তো এসেছে। রেফারিংয়ের পেশাটা কিভাবে বেছেন নিলেন সালমা আক্তার মনি? জানা যাক তার কাছ থেকেই।
‘অ্যাথলেটিকসে রানিং আর ফিটনেস দেখে আমাদের গ্রামের ফিফা রেফারি ফেরদৌস আহমেদ ভাই বাড়িতে গিয়ে আমার মায়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন দেন আমাকে যাতে রেফারিং শেখান। মা সম্মতি দিলেন। তখন থেকেই শুরু আমার রেফারিং জগতে পথচলা’- বলছিলেন সালমা আক্তার মনি।
২০১৩ সালে বাফুফে নেত্রকোনায় ৭ দিনের একটা রেফারিং কোর্স করেছিল। ওই কোর্সে ছেলেদের সঙ্গে একমাত্র নারী ছিলেন সালমা আক্তার। তখন অনেকেই বাধা দিয়েছিলেন মনিকে। অভিযোগ ছিল তার নাকি বয়স কম ছিল রেফারিং কোর্সের জন্য। তারপরও থেমে যায়নি মনি। কোর্সে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে চমকে দেন সবাইকে।
কোর্সের প্রতিটি ধাপ পার হয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় রেফারি হন মনি। একসময় মনি রেফারি প্রশিক্ষণটা ছেড়েই দিয়েছিলেন নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে। কী কারণ ছিল? ‘ব্যক্তিগত কিছু কারণে আমি ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রেফারি প্রশিক্ষণ থেকে দূরে ছিলাম। পরে আমি আবার প্র্যাকটিস শুরু করি’- বলছিলেন সদ্য ফিফার সহকারী রেফারি হওয়া সালমা আক্তার মনি।