শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) শেরপুর পৌর এলাকার নবীনগর মহল্লার ফসলি জমির খালি মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। দুপুর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে মেলার কার্যক্রম। মেলাকে ঘিরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। শতবর্ষ আগে থেকে এখানে পৌষ মাসে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

মেলার আয়োজক সূত্র জানায়, মেলায় বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টি, সাজ, মুখরোচক খাবারসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মজাদার খাবাারের পষরা নিয়ে বসে নারীপুরুষ দোকানী। দোকানগুলোতে বিক্রি হয় শিশুদের খেলনা, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজষপত্র, মেয়েদের সাজ, প্রসাধনী ও চুড়ি-মালা, ঝুড়ি, বাদাম, কালাই, চানাচুর, আরও কত কি। মেলা ঘিরে শহর ও গ্রামের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়।

এদিকে মেলার আশেপাশে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ তৈরি ও খাওয়ার উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দূর-দূরান্তের কুটুমরা দাওয়াতি হয়ে আসেন। বিশেষ দাওয়াত দেওয়া হয় জামাই মেয়ে নাতীপুতিদের। বহু বছর আগে মেলাকে ঘিরে হলুদ ও শর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করতেন স্থানীয়রা।এই হলুদ-শর্ষে বাটার রেওয়াজটা এখন আর নেই। তবে বাড়িতে চলে পিঠা-পায়েস বানানোর ধুম এখনও চালু আছে। দিনব্যাপী চলে অতিথি আপ্যায়ন এবং দুপুর থেকে সবাই সমবেত হতে থাকে মেলা মাঠে এই মেলার আয়োজনে কোন রকম প্রচারণা চালানো হয় না। অনেক আগে থেকে এখানে মেলা চলে আসলেও ঠিক কত বছর ধরে চলছে তার সঠিক হিসাব এলাকাবাসী বলতে পারে না। স্থানীয় মুরুব্বিরা বলেছে এই মেলার কথা তারা তাদের বাবামায়ের কাছেও শুনেছে। আগে পৌষের শেষ ৩০ পৌষ অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এখন মেলার স্থানে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ কাঁটার পর ধান ক্ষেত মোটামোটি পৌষের ২০ তারিখের দিকে লাগানো শুরু হয়ে যায়। ফলে আয়োজনের জায়গা খালি থাকে না। তাই এখন মেলাটি পৌষের ২০ তারিখের আগেই অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় প্রতি বছর অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়া দৌড় ও গাঙ্গি খেলা। এখন যোগ করা হয়েছে সাইকেল রেস, র‌্যাফেল ড্র ও মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। দিন দিন এ মেলায় লোক সমাগমও বাড়ছে বলে আয়োজকরা জানায়।
এবার শেরপুর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসে ৩০ জনের মত ঘোড়া ওয়ালা। অপরদিকে গাঙ্গি খেলা, মিউজিক্যাল চেয়ার ও সাইকেল রেসে অংশ নেয় অসংখ্য মানুষ। মেলা শেষে খেলা বিজয়ীদের মধ্যে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়।

Share this post

scroll to top