জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বিভাগে মোট নদী দখলকারীর সংখ্যা চার হাজার ৮৪৮ জন এবং উচ্ছেদ করা হয়েছে এক হাজার ৭১৩ জনকে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) নৌ-পরিবহন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নদী দখল ও উচ্ছেদের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
বৈঠক শেষে এনআরসিসি চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানগুলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে- দখলদারদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ স্থানীয় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।’ জেলা প্রশাসকদের জন্য অপ্রতুল তহবিল এবং পর্যাপ্ত লজিস্টিক না থাকাও এর জন্য দায়ী বলে জানান তিনি।
সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এনআরসিসি জানায়, প্রতিটি বিভাগেই নদী ও নদীর তীরে বিশালাকার কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দখলদাররা স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় সেগুলো ভেঙে ফেলা যায়নি।
প্রতিবেদনে এনআরসিসি আরও বলেছে, বার বার চেষ্টা করেও বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামোগুলোও সরানো যায়নি।
ড. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং আমরা কোনো প্রভাবশালী মহলের কাছে মাথা নত করব না।’ তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী দখলকারীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে দেশের নদী রক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘সুতরাং, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো যত প্রভাবই দেখাক না কেন, চলমান উচ্ছেদ কর্মসূচি থেকে সরে আসার আমাদের কোনো কারণ নেই’, যোগ করেন তিনি।
এনআরসিসির প্রতিবেদনে নদী দখলকারী অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বিধায় এই প্রতিবেদনে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
সভায় উপস্থাপন করা নথি অনুসারে, ঢাকা বিভাগে নদী দখলদারের সংখ্যা আট হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে সাত হাজার ৩৮৭ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের হার ৮৩ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুর শহর দিয়ে প্রবাহিত লবণদহ নদীটি খাদের মতো সরু হয়ে গেছে।
বৈঠকে বুড়িগঙ্গার তলায় জমে থাকা পলিথিন অপসারণে জোর দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। যথাযথ ড্রেজার দিয়ে জরুরিভিত্তিতে এই কার্যক্রম শুরু করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে কমিটি।
এ ছাড়াও, উচ্চ আদালত যেন নদী দখলকারীদের আপিল নিষ্পত্তি দ্রুত সম্পন্ন করেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনআরসিসিকে উদ্যোগ নিতে বলেছে কমিটি।
উচ্ছেদ অভিযানের যাবতীয় খরচ উচ্ছেদের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায়ের জন্য এনআরসিসি এবং বিআইডাব্লিউটিএ যেন ব্যবস্থা নেয়, সে সুপারিশও করেছে সংসদীয় কমিটি।
এনআরসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বিভাগে মোট নদী দখলকারীর সংখ্যা চার হাজার ৮৪৮ জন এবং উচ্ছেদ করা হয়েছে এক হাজার ৭১৩ জনকে।
চট্টগ্রামে দখলদারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৩৭ জন এবং উচ্ছেদ করা হয়েছে এক হাজার ৩৫১ জনকে।
অন্তত ১২ হাজার সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নদী দখল করেছে খুলনায়। তাদের মধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬০৯ জনকে। সিলেট বিভাগে দখলদারের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪ জন এবং উচ্ছেদের হার ১৭ দশমিক নয় শতাংশ। বরিশালে পাঁচ হাজার ৬১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নদী দখল করেছে এবং এ বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রশাসন উচ্ছেদ করেছে ৭৯৩ জনকে। রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত দখলদারের সংখ্যা দুই হাজার ৬৯৩ জন। এর মধ্যে ৩৩৬ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকরা এ পর্যন্ত উচ্ছেদ করেছেন এক হাজার ২৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। এ বিভাগে দখলদারের সংখ্যা দুই হাজার ৭০৭ জন।