নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাকিব আল হাসান কী করছেন, এ নিয়ে আগ্রহ ছিল সবার। সাকিবের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল কীভাবে কেটেছে সময়। সাকিব উত্তর দেননি। বরং গোপন রেখেছেন নিজের কার্যক্রম। সাকিব গোপন রাখলেও খুব কাছ থেকে যারা তাকে দেখেছেন তাদের কাছে স্পষ্ট তিনি কী করেছেন। বিশেষ করে ফিটনেস টেস্টের ফল তো স্পষ্ট বলছে, সাকিব আসলেও কী করেছেন?
ক্রিকেটারদের ফিটনেস যাচাইয়ের জন্য বিপ টেস্ট নিচ্ছে বিসিবি। সোমবার সাকিবের বিপ টেস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও দুইদিন তা পেছায়। বুধবার সকাল ১০টায় মিরপুরের ইনডোরে চলে সাকিবের ফিটনেস যাচাই। যেখানে সাকিব চমকে দেন সবাইকে। ১৩.৭ স্কোর নিয়ে সাকিব বিপ টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর গড়েন।
শেষ দুই দিনে যারা বিপ টেস্ট দিয়েছিল তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাকিবের এ স্কোরে মোটেও বিস্মিত নয় বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার। তিনি সাফ জানালেন, দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল এ স্কোর।
তিনি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের ফল এ স্কোর। এক বছর ক্রিকেটের বাইরে ছিল। কিন্তু ফিটনেসে সে বিন্দু পরিমাণে ছাড় দেয়নি। নিজের কাজ ঠিকমতো মেইন্টেইন করেছে।’
দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন তুষার কান্তি হাওলাদার। সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ জুনিয়র থেকে সিনিয়র হয়েছে তার অধীনেই। এর আগে সাকিবের একাধিক ফিটনেস যাচাই করেছেন তিনি। কিন্তু এমন ফুরফুরে ও ঝরঝরে সাকিবকে এর আগে কখনো দেখেননি। স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি বিসিবির সিনিয়র এ ট্রেনার, ‘খুব ভালো অবস্থায় আছে সাকিব। এর আগে এমন সাকিবকে দেখিনি এবং এমন স্কোর গড়তেও দেখিনি। বিস্মিত নই মোটেও।’
শেষ দুইদিনের একশর বেশি ক্রিকেটার দিয়েছেন বিপ টেস্ট। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা নিয়মিত মুখ তাদের বিপ টেস্টই হয়েছে। সিনিয়র অনেকেই ভালো করেছেন। সোমবার প্রথম দিন মোহাম্মদ আশরাফুল ১১.৪, শাহরিয়ার নাফিস ১১.১ স্কোর গড়েছেন। এনামুল হক জুনিয়রের স্কোর রীতিমত বিষ্ময় জাগানিয়া, ১২.২। রাজ্জাকের স্কোর ১১ পেরিয়েছে। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল আছে।
কিন্তু সাকিবের স্কোর তো সবচেয়ে এগিয়ে। তাইতো বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে তুষার বলেন, ‘অন্য সবার থেকে সাকিবের বড় পার্থক্য হলো, সাকিব একজনই। নিজের কাজটা কী সেটা সে করতে জানে। আমরা সবাই জানি ও অন্য ধাতুতে গড়া। তাই ওর কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত।’
ফিটনেস নিয়ে সাকিবের লড়াই শুরু ২০১৯ সালের শুরু থেকে। ইনজুরিতে থাকায় দলের সঙ্গে নিউ জিল্যান্ড সফর করেননি। ছয় মাস ছিলেন দলের বাইরে। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে শরীরে একটা আলস্যের মেদ জমে। কিন্তু সাকিব তা হতে দেননি। ৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন। কঠিন ডায়েট চার্ট আর জিমে হাড়ভাঙা খাটুনিতে সাকিব সফল হয়েছিলেন।
এরপর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গিয়ে আধুনিক সকল সরঞ্জাম দিয়ে চলে সাকিবের উন্নত ট্রেনিং। ব্যাস সাকিবকে আর কে পায়। সেবার আইপিএলে গেলেও মাত্র ৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ এসেছিল। ডাগআউটে বসে না থেকে সাকিব মনোযোগ দেন স্কিল ট্রেনিংয়ে। দেশ থেকে উড়িয়ে নেন মেন্টর মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। অসাধারণ সুযোগ-সুবিধায় চলে সাকিবের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট তো সেই পরিশ্রমের ফল।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্বরূপে ফিরতে সাকিব নিজেকে প্রস্তুত করেন শৈশবের বিদ্যাপীঠ বিকেএসপিকে। সেখানে সাকিব পাশে পান দুই মেন্টর মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। তারা দুইজন স্কিল ট্রেনিং নিয়ে কাজ করেন। ফিটনেস ফিরে পেতে সাকিবকে ট্রেনিং করান দেশের সাবেক দ্রুততম মানব ও বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফী ও বিকেএসপিরই তরুণ বক্সিং কোচ আরিফুল করিম।