মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের চমক অপেক্ষা করছে বলে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
গণভবনের বিশ্বস্ত একাধিক সত্রে জানা গেছে, গত দুই মেয়াদে থাকা সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আমলনামা শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। সেসব বিবেচনায় নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা থেকে অদক্ষ ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা মন্ত্রীদের বাদ দিতে যাচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকারের মাধ্যমে সেরকম আভাস দিয়ে রেখেছেন তিনি।
সত্গুলো জানায়, মন্ত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। শেষ মুহূর্তে ওই সব রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এমনকি কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসাবও দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব দেখে অনেক নামীদামি মন্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাদের বাদ দিয়ে এবারের মন্ত্রিসভায় সম্ভাবনাময়, স্বচ্ছ ভাবমর্যাদাসম্পন্ন, দক্ষ, তরুণ এবং দলীয় কাজে আসবেন এমন নেতাদের প্রাধান্য দিবেন তিনি।
সূত্রগুলো আরো জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন। এবার তাদের বিদায় নিতে হতে পারে। সুশাসনের অঙ্গীকার করে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
সে হিসেবে বাদ পড়াদের তালিকায় থাকতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গম কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচিত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানাভাবে সমালোচিত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন চিন্তা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
বয়সের কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সমাজকল্যাণ প্রতমন্ত্রী নরুজ্জামান আহমেদ বাদ পড়তে পারেন বলে দলের শীর্ষ মহলে আলোচনা রয়েছে। বাদ পড়তে পারেন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবও।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এবার তাদের মন্ত্রিত্বে ফেরা অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে বর্তমান মন্ত্রিসভার ২০ মন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন বলে সূত্রগুলোর ধারণা।
এ ছাড়া ১০ বছর মেয়াদ পূরণ করেছেন এমন হিসাবেও বাদ পড়তে পারেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় চলে এসেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ মাহবুবউল আলম হানিফ ও ডা: দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় টেকনোক্র্যাট কোটায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানও থাকতে পারেন মন্ত্রী তালিকায়।
এ ছাড়া তালিকায় আরো থাকতে পারেন সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় ডা: হাবিবে মিল্লাত, নরসিংদী-৪ থেকে নির্বাচিত নুরুল মজিদ হুমায়ুন, নওগাঁ-২ আসন থেকে নির্বাচিত শহীদুজ্জামান সরকার, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন, বগুড়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। আলোচনার বাইরে নেই ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মর্তুজাও। বিশ্বকাপ শেষে তাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর।