নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখল করা ১৪ বিঘা জমি দখলমুক্ত করে সরকারি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলে রাখা প্রায় ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার করেন। পরে ওই জায়গায় সরকারি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তিনি।
এর আগে গত রোববার বিকেলে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দখলে রাখা সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে শাসনের পক্ষ থেকে এসিল্যান্ড আল মামুন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন সময় স্বল্পতা ও বুলডোজার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ভেতরের অবৈধ দখলে রাখা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ না করে অভিযান সমাপ্ত করেন। তবে সরকারি সম্পত্তিতে টাইগার সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেন উপজেলা প্রশাসন। পরে উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ে দখল ছেড়ে না দেয়ায় বৃহস্পতিবার পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
এ দিকে হাজী সেলিম সরকারি সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সম্পত্তিও দখল করেন। সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাধে প্রভাব খাটিয়ে তিনি ১০ জনের প্রায় পাঁচ বিঘা জমি দখল করেন। পরে এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ১০ জন।
এছাড়াও দেশের প্রভাবশালী শিপইয়ার্ড কোম্পানি আনন্দ শিপয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ কোম্পানিরও ১৪ শতাংশ জমি দখল করে নেন হাজী সেলিম।
ইসলামপুরের বাসিন্দা আলী ইসলাম জানান, হাজী সেলিম প্রভাব খাটিয়ে তার দুই বিঘা সম্পত্তি দখলে নিয়ে নেন। এ বিষয়ে একাধিকবার তার মালিকানাধীন টাইগার সিমেন্ট কারখানায় গেলেও আমার জমি ক্রয় করে নেননি হাজী সেলিম। আমি তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দায়ের করেছি। এছাড়াও আরো ৯ জনের জমি দখল করেন হাজী সেলিম।
ইসলামপুর এলাকায় প্রভাবশালী কামাল হোসেন ওরফে নেতা কামালের দখলে থাকা প্রায় তিন বিঘা খাস জমি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন। ইসলামপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় কামাল হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই জমিতেও জেলা শাসকের পক্ষে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ সময় অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় লেখা একটি সাইনবোর্ড অপসারণ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আতাউর হমান, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন ও ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারি ১৪ বিঘা খাস জমি দখলমুক্ত করতে বেঁধে দেয়া তিন দিন সময় শেষ হওয়ার পর পুনরায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হাজী সেলিমের দখলে থাকা প্রায় ১৪ বিঘা জমি থেকে একটি টিন সেড গোডাউন ও পাথরের স্তুপ অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত করা ওই সরকারি সম্পত্তিতে টিনের দেয়াল স্থাপন করা হবে। এছাড়াও ওই সম্পত্তি সবসময় দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় পিরোজপুর ভূমি কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হবে।
সম্প্রতি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর এক র্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে একে একে জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এর পর থেকেই হাজী দখলে থাকা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন।