জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও আদালত- কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে তারা কেউই নির্বাচিত নয়। এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে তারা কেউই জনপ্রতিনিধি নয়।
সেগুন বাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গণফোরামের সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। দলের বর্ধিত সভা শেষে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রিয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, সুলতান মোহাম্মাদ মনসুর আহম্মদ, মোকাব্বের খান, আ.ও.ম. শফিক উল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, রওশন ইয়াজদানী, মোশতাক আহমদ, খান সিদ্দিকুর রহমান, সফিউর রহমান বাচ্চু, রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ।
ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, আমরা ইতোপূর্বে এই নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, তা না হলে ঐক্যবদ্ধ জনগনকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণআন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের হারানো গণতন্ত্র পুনরোদ্ধার করবো। জনগন ঐক্যবদ্ধ থাকলে অচিরেই বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন, কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
ড. কামাল বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ভেবেছিলাম। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যেভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে তাতে সংবিধানের ওপর আঘাত করা হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপরও আঘাত এসেছে। দেশবাসী আজ উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠায় আছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণফোরামের যে দুই নেতা নির্বাচিত হয়েছে তাদের শপথ গ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে এব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের দু’জনকে এত কিছুর পরও বিজয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। আশা করি সংসদে তারা তাদের কার্যকর ভূমিকা থাকবে। তবে শপথ নেয়ার বিষয়টি এখনও চুড়ান্ত হয়নি। এব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি তার বক্তব্যে ইঙ্গিত করেন। তবে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এই শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্টে কোনো ফাটল ধরবে না। সরকারকে চাপে রাখার জন্য এই ঐক্য থাকবে। কারণ আমরা ঐক্য চাই।
নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে ড. কামাল বলেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে নির্বাচনে ভোট কারচুপি হওয়ার কোনো দলিলপত্র আছে কিনা এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ভোট কারচুপির দলিলপত্র আছে। তা দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত নেই। তবে ২০ দলীয় জোটে জামায়াত আছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আর্ন্তজাতিকভাবে এ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে কি- না আমার জানান নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে যেসব দেশের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাদের মন্তব্য একটু খুটিয়ে দেখা উচিত। ওখানে নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক ‘কিন্ত’ আছে।
আপনাদের আহবানে জনগণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় যায় নি বা তারা আপনাদের আহবান সাড়া দেয়নি- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ভোর থেকে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে বলেছি, তারা তো রাতে কাজ সেরে ফেলেছে।