রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির হিলটপে গড়ে তোলা হয়েছে এক অপরূপ পর্যটন কেন্দ্র নীলাদ্রি। সাজেকের মতোই বিলাইছড়ি পাহাড়ের বুকজুড়ে চলে মেঘের অপরূপ খেলা। দিনের বেলায় একরূপ, আর রাতে অন্যরূপ বিমোহিত করে রূপসী এ পর্যটন কেন্দ্র। এ যেন ক্লান্ত পথিকের একরাশ কান্তির ছায়া। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে বিলাইছড়ির পাহাড়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো গড়ে উঠেছে পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র নীলাদ্রি।
পাহাড়, হ্রদ, নদী, ঝর্ণা প্রবাহিত হয় বিলাইছড়ির কোলজুড়ে। রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই থেকে নদীপথে ইঞ্জিনবোট কিংবা লঞ্চে যেতে হয় বিলাইছড়ি। নদীপথে যাওয়ার সময় বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে সাম্পান কিংবা বোটে করে হ্রদ-পাহাড়ের মিতালি মনকে আচ্ছন্ন করে অন্যরকম ভালো লাগায়।
উদ্যোক্তাদের একজন বিলাইছড়ি শিল্পকলা একাডেমীর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি জানান, এতো অল্প সময়ে বিলাইছড়ি নীলাদ্রি পর্যটন কেন্দ্র এমন জনপ্রিয় হবে, তা ভাবিনি। ইতোমধ্যে এখানে পাহাড়ের উচুঁতে নির্মিত কটেজে শত শত পর্যটক এসে রাতযাপন করছেন।
তিনি আরো জানান, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন হিলটপে গড়ে তোলা নতুন এ পর্যটন কেন্দ্র নীলাদ্রি রিসোর্ট ও শিশুপার্ক রয়েছে। এছাড়া রিসোর্ট সংলগ্ন উপজেলা ক্যাফেতে আসা পর্যটকদের জন্য ঘরোয়া পরিবেশে উন্নতমানের খাবারের সুব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নীলাদ্রি রিসোটের তত্ত্বাবধায়ক ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন কান্তি দাশ জানান, নীলাদ্রি রিসোর্টে রয়েছে তিনটি উন্নতমানের কটেজ। কটেজগুলোর নামকরণ করা হয়েছে উপজেলার ঝর্ণা ও নদীর নামে। রিসোর্টের প্রবেশমুখে ঝুলন্ত সেতু ও রিসোর্টের কেন্দ্রে পাহাড়ের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে দারুণ এক মাচাং। যেখানে বসে দূর পাহাড়ে মেঘের ছটা, পূর্ণিমার আলো অবলোকন করেন পর্যটকরা। তা ছাড়া রোদ-বৃষ্টির ছোঁয়ায় রংধনু দেখতে পাওয়া যায় এখানে বসে।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, বিলাইছড়িতে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা রয়েছে। আর রয়েছে নীলাদ্রি রিসোর্টে আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিশেষ করে এখানে এসে পূর্ণিমার সময়ে পাহাড়ের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা।
তিনি আরো বলেন, এখানে পাহাড়ের সাথে মেঘের খেলা চলে সারাক্ষণ। বিকেল বেলা মেঘের খেলা দেখতে এসে মেঘ যখন গা ছুয়ে যায় পর্যটকরা তখন অভিভূত হয়ে পড়েন। অনেককেই মনে করেন সাজেক গিয়েই শুধু পাহাড়ে মেঘের খেলা দেখা যায়। কিন্তু বিলাইছড়ির নীলাদ্রি থেকেও পাহাড়ে মেঘের খেলা দেখা যায় তা অনেকের অজানা। তাছাড়া সাজেকের দূরত্ব অনেক। সে তুলনায় বিলাইছড়ির যোগাযোগ অনেক সহজ ও নিরাপদ। বিলাইছড়ির নীলাদ্রি পর্যটন কেন্দ্র এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে, স্বল্প খরচের মধ্যে সব সকম পর্যটন সুবিধা এখানে রয়েছে।
বিলাইছড়ির নীলাদ্রি গড়ে উঠার পর মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও যোগ করেন বিলাইছড়ির ইউএনও পারভেজ চৌধুরী। পর্যটকদের কাছে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিলাইছড়ির নীলাদ্রি একটা ভালো স্থান দখল করে নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বিলাইছড়িসহ পার্বত্য এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, এখানে পর্যটনের অনেক প্রাকৃতিক সম্ভাবনা আছে। প্রকৃতিকে ঘিরে এখানকার পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব। পাহাড়ের প্রাকৃতিক যে সৃষ্টি রয়েছে তা অক্ষুন্ন রেখেই এখানকার পর্যটন বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য রেম লিয়ানা পাংখোয়া বলেন, বিলাইছড়ির যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। ছোট-বড় অসংখ্য ঝরনা দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করেন। তিনি বলেন, এই পর্যটন সম্ভাবনাকে আরো সম্প্রসারিত করতে ভবিষ্যতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে।
পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসে কিংবা বন্ধু-বান্ধব মিলে দল বেঁধে ঘুরতে এসে নীলাদ্রি রিসোর্টে রাত্রিযাপন ও প্রকৃতি ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দু’একদিন সময় কাটানোর জন্য বিলাইছড়ি হতে পারে রাঙ্গামাটির পর্যটনের একটি আকর্ষণীয় স্থান।