নাসা পৃথিবী থেকে কয়েক কোটি কোটি কিলোমিটার দূরের এক গ্রহাণু থেকে পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করার জন্য একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছিল। কিন্তু মহাকাশযানটি এত বেশি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলেছে যে তা এখন যান থেকে উপছে পড়ে মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সৌরমণ্ডল কীভাবে গঠিত হয়েছিল তার রহস্য জানার জন্য এই গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নাসার মহাকাশযান অসিরিক্স-রেক্সএর কর্মকর্তারা বলছেন, নভোযানটি বেন্নু নামের গ্রহাণুতে অবতরণ করে এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে। যানটি প্রস্তরখণ্ড সংগ্রহের কাজ সম্ভবত খুবই ভালভাবে সম্পন্ন করেছিল। তারা বলছেন নভোযানটি যেসব ছবি পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি পাথরখণ্ড বেরিয়ে থাকার কারণে নমুনা সংগ্রহের একটি আধারের দরজা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে এবং সেখান থেকে নমুনার অংশ ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
মিশন টিম জানাচ্ছে, যে যন্ত্র দিয়ে পাথরের খণ্ডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, হয়ত পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় কিছু প্রস্তরখণ্ড সেই যন্ত্রের ঢাকনার মাঝখানে সম্ভবত আটকে পড়েছে। এর ফলে প্রস্তরখণ্ডগুলো যন্ত্র থেকে আবার মহাকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। নাসার বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন, এসব প্রস্তরখণ্ডগুলো নিরাপদে একটি ক্যাপসুলে ঢোকানো যায় কি না। ”যেসব পাথরখণ্ডের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশই বেরিয়ে যাচ্ছে,” বলেছেন মিশনের প্রধান ডান্তে লওরেত্তা।
তিনি জানাচ্ছেন নভোযানটি আনুমানিক প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের পাথরের খণ্ড সংগ্রহ করেছিল বলে তারা মনে করছেন। মহাকাশযানটি এর থেকে বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে পারতো না, তিনি বলেন। “প্রস্তুরখণ্ডগুলোর টুকরো ভেতর থেকে যে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমি দারুণ উদ্বিগ্ন। কারণ আমরা এখানে নিজেদের সাফল্যের বলি হয়ে গেছি।”
”সময় এখন মহার্ঘ,” সাংবাদিকদের বলেছেন নাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রশাসক, টমাস জারবুশেন। নাসা এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে ভেতরে যতটুকু রয়েছে, তা যেন হারিয়ে না যায়, সেগুলোর বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তারা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। অসিরিক্স-রেক্স মিশনের ২০২৩ সালে এসব প্রস্তরখণ্ড পৃথিবীতে নিয়ে আসার কথা।
যে আধারের মধ্যে পাথরের টুকরোগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে সেটি নভোযানের ভেতরে নিরাপদে ঢোকানোর চেষ্টা করা হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন মহাকাশযানটি ঠিক কী পরিমাণ পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল, এর ফলে তা আর সঠিকভাবে জানা সম্ভব হবে না।
”আমাদের সংগ্রহ ক্যাপসুলটাকে দ্রুত নিরাপদে ভেতরে ঢোকানোর জন্য কাজ করতে হচ্ছে বটে, কিন্তু সেটা যদি আমরা খুব তাড়াতাড়ি করতে পারি তাহলেও আমাদের হাতে যথেষ্ট নমুনা এসে পৌঁছবে,” বলছেন মি. জারবুশেন। “আমরা খুবই উদ্দীপ্ত, কারণ এই পাথরগুলো আমরা মনে করছি বিজ্ঞানীদের হাতে ঐতিহাসিক মুহূর্তের চাবি এনে দেবে।”
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরমণ্ডল কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবেন। ২০২৩এ নভোযানটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পর পাথরের নমুনাগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য অধীর আগ্রহে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করছেন। বেন্নু গ্রহাণুর পাথরের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সৌরমণ্ডল গঠনের অজানা রহস্য। এই নভোযানটি নাসা পাঠিয়েছিল ২০১৬ সালে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।