ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে বিট পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি : ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শহর থেকে গ্রামের সর্বত্রই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। তিনি বলেছেন, নারীরা আমাদেরই মা-বোন। তাদের নিরাপদে ঘরে ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।

ময়মনসিংহের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জেলা পুলিশের উদ্যোগে মহানগর ও কোতোয়ালী বিট পুলিশিং আয়োজিত দেশব্যাপী ধর্ষণসহ সকল নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বিট পুলিশিং সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভ্যসমাজের চাওয়া-পাওয়া হলো নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা। উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নারীদের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তামূলক আইন করেছেন। ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান করেছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পীর সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান। বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার নিরঞ্জন দেবনাথ, অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন ভ‚ইয়া, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম, জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর সভাপতি এহতেশামুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান আল হোসাইন তাজ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রব, জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. শামসুন্নাহার পারভীন, সহ-সভাপতি দিলরুবা শারমিন, সদস্য আনোয়ারা খাতুন, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিমা আজাদ, মুমিনুন্নেছা কলেজের অধ্যাপক শিল্পী সাহা, নিউজ চ্যানেল জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ প্রমুখ। এসময় জাতীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবসার, রেঞ্জ পুলিশ সুপার সৈয়দ হারুন অর রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, শফিকুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন, ফারুক হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এ বি এম নুরুজ্জামান খোকন, ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব, মহানগর ছাত্রলীগের নেতা আরিফ, কৃষকলীগের নেতা এবি সিদ্দিকসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার, ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সৈয়দ মাবুবুর রহমানসহ পুলিশের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এরআগে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে সর্বস্তরের মানুষ সমাবেশে যোগদান করেন।

গৃহায়ণ ও গণপ‚র্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি বলেছেন, ‘আমাদের মা, বোনরা যাতে নিরাপদে ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন সেজন্য সরকার নারীদের সুরক্ষার জন্য আইন সংশোধন করে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান করেছেন। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানান তিনি।

নারীরা কোনোভাবেই অসহায় নয় বলে মন্তব্য করে রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য নয়, এটাই নারীর সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছেন। অনেক আইনের পরিবর্তন করেছেন। সবশেষ ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদন্ডের বিধান করেছেন। নারীদের সাহসী হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি সেবা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার নিরঞ্জন দেবনাথ জনগণকে সচেতন করতে বিট পুলিশিং কার্যক্রম সফল করতে এমন সমাবেশের আয়োজন করায় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

বিট পুলিশিং কার্যক্রমের সুফল বর্ণনা করে অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ব্রিটিশ আমলেও বিট পুলিশিং ছিল কিন্তু আমরা বুঝিনি। বর্তমান আইজিপি ঢাকার কমিশনার থাকাকালে বিট পুলিশিং শুরু করেন। বিট পুলিশ গ্রাম-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিবে আর অপরাধ দমনে কাজ করবে। জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশ যাবে। বিডি পুলিশ হেল্প লাইন ময়মনসিংহ বিভাগীয় পুলিশ চালু করেছিল বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ৯৯৯ এর জরুরি সেবার কথা প্রচারে গণমাধ্যমকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, জনগণের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা কম হলেও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের ভ‚মিকা প্রসংশনীয়। জনগণের কল্যাণে বিট পুলিশিং কার্যক্রম সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এই দেশ এখনো নারীদের দখলে বলে মন্তব্য করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান বলেন, নারী অধ্যুষিত এই দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। অচিরেই দেশ থেকে নারী নির্যাতনকারিরা বিতারিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম বলেন, বিএনপির আমলে নারী নির্যাতন অভিযোগের একটি বিচারও হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনকারি কেউ ছাড় পাচ্ছে না। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এদেরকে সামাজিক ভাবে বয়কট করার আহবান জানান তিনি।

ময়মনসিংহ বিভাগে ধর্ষণ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, এরপরও নদীর ওপারে সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুনীদের বিচরণ দেখা যায়। পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে ঘরে ফেরায়। ধর্ষণ নারী নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।

ধর্ষণকারির শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা সরকারের আইনি পদক্ষেপ চোখে দেখে না, তারা ৭১’ এর রাজাকারের বংশধর। যেখানেই ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ এখন আধুনিক এবং সচেতন ও সোচ্চার। আসুন সবাই সচেতন হই। তাহলে ধর্ষণ নারী নির্যাতনসহ কোনো অপরাধই ঘটবে না।

পারিবারিকভাবে সন্তানদেরকে নৈতিক সুশিক্ষা দেয়ার আহবান জানিয়ে পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, যৌন নির্যাতনকারিদের প্রতিরোধ করতে সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের সচেতনতাই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে সক্ষম। বিট পুলিশ মামলার জন্য অপেক্ষা করবে না। খবর পেলেই ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি। ##

Share this post

scroll to top