‘অটো পাস’-এর দাবিতে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ

বিগত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবিতে সোমবার গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন ও ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকালে বিগত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজের চতুর্থ বর্ষের (সম্মান) পরীক্ষার্থীরা ওই দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রেজাউল ইসলাম জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে চতুর্থ বর্ষ (অনার্স) পরীক্ষা চলাকালে পাঁচটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব তথা মহামারীর কারণে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ ও এর সকল পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, কলেজ বন্ধ হওয়ার আগে চতুর্থ বর্ষের অনুষ্ঠিত পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে বাকি বিষয়ের ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হোক।

মৌখিক ও বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও গড় পদ্ধতি অনুসরণ করে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা।

করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টির জন্য পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় ফলাফল দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

ইতোপূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর আমাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলছেন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাবিহীন এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আমাদের ফল প্রকাশের ব্যাপারে অদ্যবদি কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। এতে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের আলহাজ মকবুল হোসেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একই বর্ষের বিভাগের মো. লামিউল ইসলাম জানান, অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সময় করোনা মহামারীর কারণে তিনটি পরীক্ষা বাকি রেখে সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ৬ মাসেও ওই তিন পরীক্ষা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এখনও বাকি পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি এবং অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আগের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণপূর্বক অটো পাশ দিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম নিরব জানান, ইতোপূর্বে তাদের দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। অদ্যাবধি ওই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় সোমবার দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন।

জামালপুরের মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থী খুশবু রহমান নিশি জানান, দেশে করোনা মহামারী শুরুর আগে আমাদের ৯টি বিষয়ের মধ্যে ৫টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ৫টি বিষয়ের সঙ্গে ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর যোগ দিয়ে তাদের ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গাছা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, পরীক্ষার ফলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরে প্রায় ২০ মিনিট তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা রাস্তা থেকে সরে পাশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে। যাতে তারা ওই এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে না পারে তার জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, এটা টার্মিনাল ডিগ্রি পরীক্ষা। এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মেধা অনুযায়ী চাকরি হবে। পরীক্ষা ছাড়া কোনভাবেই ফল প্রকাশের সুযোগ নেই। এইচএসি’র সঙ্গে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের বিষয়টি এক করলে চলবে না। এইচএসসি পরীক্ষা ফল শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির বিষয়টি জড়িত, চাকরির জন্য নয়। পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। অনুকূল পরিবেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং ন্যূনতম সময়ের মধ্যে ফলাফল দেয়া হবে। তবে ভিসি স্যার এইচএসচি পরীক্ষার সঙ্গে অনার্সের পরীক্ষার ফল প্রকাশের তুলনা করার কথা অস্বীকার করেছেন।

Share this post

scroll to top