ময়মনসিংহ বিভাগের ১৪০টি রেল সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। তবুও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব রেল সেতুর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। মাঝে মধ্যে এসব সেতুতে গোলযোগ ধরা পড়লে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১০০ বছর বা তারও পুরোনো এসব সেতুর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলেও এগুলোর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এসব সেতুর এক্সেল লোড ধরা আছে মাত্র ১১ দশমিক ৬ টন। এদিকে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অর্থাৎ ময়মনসিংহ সেকশনে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৪০টি রেল সেতুর মধ্যে মাইন, মেজর ও সাধারণ সেতু কবে নাগাদ নতুন করে সংষ্কার হবে তা নিয়েও চলছে জটিলতা।
এদিকে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীর অধীনে ২৯৪টি রেল সেতু রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে জয়দেবপুর-বিদ্যাগঞ্জ সেকশনে ১২১টি মাইনর ও ৮টি মেজর (মোট ১২৯টি) রেল সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এ সেকশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৮৮২ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে। আর বিদ্যাগঞ্জ-জামালপুর ও জামালপুর-বাহাদুরাবাদঘাট সেকশনটি নির্মাণ করা হয়েছে যথাক্রমে ১৮৯৬ থেকে ১৮৯৯ ও ১৯০৯ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে। এ সেকশনে ৩৩টি মাইনর, ৩টি মেজর ও ১টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ মোট ৩৭টি রেল সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে।
এর বাইরে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা রুটটি ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ ও নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রুটটি ১৯২৬ থেকে ১৯২৯ সালে নির্মাণ করা। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা রুটে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩৯টি মাইনর, ৫টি মেজর ও ১টি গুরুত্বপূর্ণ (মোট ৫৫টি) রেল সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। আর নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রুটে ৪৫টি মাইনর, ২টি মেজর ও ১টি গুরুত্বপূর্ণ (মোট ৪৮টি) রেল সেতুর মেয়াদ পেরিয়ে গেছে।
ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীর অধীনে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্জাইল সেকশনটি নির্মাণ করা হয় ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে। এ রুটে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে রেল সেতু ২৫টি। এর মধ্যে মাইনর ১৯টি ও ৬টি মেজর। এছাড়া সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলীর অধীনে সিলেট-ছাতকবাজার রুটে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া রেল সেতু ৪৭টি। এর মধ্যে ৩৩টি মাইনর, ১১টি মেজর ও ৩টি গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতু রয়েছে।
তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ রেলপথ রয়েছে দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। আর এসব পথে ছোট-মাঝারি ও বড় মিলিয়ে তিন হাজার ৬৫০টির বেশি রেল সেতু রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ২৭০টি সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব রেল সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। মাঝে মধ্যে এসব সেতু ধসে পড়ে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে ৭৬৫টি রেল সেতুর আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে।
আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া এসব সেতু পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসনে দুটি পৃথক প্রকল্প নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এর মধ্যে মেজরগুলোর স্থলে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। আর মাইনর সেতুগুলোর স্থলে নির্মাণ করা হবে বক্স কালভার্ট। এজন্য পূর্বাঞ্চলের মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৮২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর পঞ্চিমাঞ্চলের সেতুগুলো পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এদিকে ইটের গাঁথুনিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় এসব সেতুতে ট্রেন চলাচলে নিয়ন্ত্রণাদেশ দেওয়া হয়। এতে ট্রেন চলাচলে সময়ানুবর্তিতা হ্রাস পাওয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া যাত্রী সাধারণের মনে নিরাপত্তা ভীতির সঞ্চার হয়। তাই সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ২৫ টন এক্সেল লোড ধরে সেতুগুলোর ডিজাইন করা হবে। এতে দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আর দুই প্রকল্প মিলিয়ে সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৮১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বেশকিছু রেল সেতু পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে বা চলমান আছে। বাকি মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুগুলো পুনর্নির্মাণে দুটি পৃথক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্প দুটি যাচাই-বাছাই চলছে। এরপর প্রকল্প দুটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর যাবে পরিকল্পনা কমিশনে। তারপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হবে।