আজ বাদে কাল ৩০ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ভোটার ও সমর্থকদের মাঝে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি আসনেই এবার ভোটার ও কেন্দ্র বেড়েছে। সর্বশেষ জেলার ৫টি আসনে বিভিন্ন দলের ৩২জন প্রার্থী প্রতিদন্ধীতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্ধিতায় আছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১০ প্রার্থী।
সুনামগঞ্জের-৫টি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এলডিপি, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণতন্ত্র পার্টি, খেলাফত মজলিস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ন্যাপ, বিএনএফের মোট ৩২জন প্রার্থী। মাঠে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর উপস্থিতি থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই। ভোটযুদ্ধে আলোচনায় আছেন দুই দলের ১০জন প্রার্থী।
নির্বাচনী পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবার সুনামগঞ্জে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যাই বেশি। নতুন ভোটাই এবার নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা ৫টি আসনের সচেতন জনসাধারণের। আর নতুন ভোটারা বলছেন, সৎ, যোগ্য আর এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন, অতীতে কাজ করেছেন এমন কাউকেই বেছে নেবেন তারা।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় নিবাচনী ৫টি আসনের প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ইতোমধ্যে ভোট সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার স্বার্থে ও আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ভোটকেন্দ্রগুলোতে তালিকা করে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা রিটানিং অফিস ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৬৬৮টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র ৪১৬টি ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র ২৫২টি। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১৫প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ১৪প্লাটুন মাঠে ও ১প্লাটুন রিজার্ভ থাকবে। পুলিশের ১৭১৮জন্য সদস্য নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে কাজ করবেন। এর মধ্যে এএসপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত রয়েছে। সুনামগঞ্জের ৯৫৬জন ও জেলার বাইরে থেকে এসে ৭৬২জন পুলিশ সদস্য নির্বাচনী দ্বায়িত্ব পালন করবেন।
জেলার ৫টি আসন ১১টি উপজেলা ও ৮৮টি ইউনিয়ন এবং ৪টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। জেলায় নিবাচনী আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬লাখ ৪৭হাজার ৫শত ১১জন। যার মধ্যে মোট পুরুষ ভোটার ৮লাখ ২৩হাজার ৬শত ১৬জন এবং নারী ভোটার ৮লাখ ২৩হাজার ৮শত ৯৫জন। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৫লাখ ২হাজার ৯শত ৭৩জন। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১লাখ ৪৪হাজার ৫শত ৩৮জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবছর সুনামগঞ্জ জেলায় মোট ভোটকেন্দ্র হলো ৬শ ৬৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩ হাজার ২শত ৭৪টি।
ভোটার ও প্রার্থীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা) আসনে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন। এছাড়াও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাফিজ মাওলানা মুফতি ফখর উদ্দিন (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), বদরুদ্দোজা সুজা (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), আমান উল্লাহ আমান (জাকের পার্টি)।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ডঃ জয়া সেনগুপ্তা ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর মাঝে। এছাড়াও এই আসনে লড়ছেন মাহমুদ হাসান চৌধুরী (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), আব্দুল হাই (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), গোলজার আহমেদ (গণতন্ত্রী পার্টি), নিরঞ্জন দাস (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি)।
সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে লড়ছেন ৬জন প্রার্থী। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ মান্নান এবং বিএনপি ও ২০দলীয় জোট প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনূর পাশা চৌধুরী’র মাঝে।
এছাড়াও এই আসনে লড়ছেন মাহফুজুর রহমান খালেদ (এলডিপি), মুহিবুল হক আজাদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), শাহজাহান চৌধুরী (জাকের পার্টি) ও সৈয়দ শাহ মুবাশ্বির আলী (মুসলিম লীগ)।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন ৭জন প্রার্থী। মূল লড়াই হবে মহাজোট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডঃ পীর ফজলুর রহমান (জাতীয় পার্টি) ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোঃ ফজলুল হক আছপিয়ার মাঝে। এছাড়াও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তানভীর আহমেদ তাসলিম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মোহাম্মদ দিলোয়ার (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মোঃ কামরুজ্জামান (স্বতন্ত্র), মোঃ আজিজুল হক (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস) ও আল হেলাল মোঃ ইকবাল মাহমুদ (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ)।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৮জন প্রার্থী মাঠে থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী’র মাঝে। এছাড়াও এই আসনে লড়ছেন মোঃ আশরাফ হোসেন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট), আব্দুল ওয়াদুদ (বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ), নাজমুল হুদা (জাতীয় পার্টি), শফিক উদ্দিন (খেলাফত মজলিস), আইয়ুব করম আলী (গণফোরাম), হোসাইন আল হারুন (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)।