হেফাজত থেকেও আহমদ শফীর পদত্যাগ চেয়ে শীঘ্রই আন্দোলন

হেফাজতে আমীরশীঘ্রই হেফাজত থেকেও আহমদ শফীর পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে নামছে কওমিপন্থীরা। হাটহাজারি মাদ্রাসায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সারাদেশের আলেমদের মাঝে এনিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। ‘হেফাজতে আহমদ শফী ঠেকাও’ আন্দোলন আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেফাজতের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের মন্তব্য দেখা গেছে।

বিশেষ করে আহমদ শফীর বিরুদ্ধে নতুন করে সৃষ্টি পরিস্থিতির এই পরিবর্তন একেবারে নাটকীয় ছিল না। অথচ এক সময় এটা কল্পনাও করা যেতো না। হেফাজতের আমীর শাহ আহমদ শফী ছিলেন কওমি আঙ্গিনায় সবচেয়ে সম্মানিত নাম। হেফাজতে তার কথাই ছিল শেষ কথা। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে। একদিকে তার বয়স বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, ছেলে আনাস মাদানীর প্রভাব বাড়তে থাকে। কওমিপাড়ায় যার সমালোচক অনেক।

দুর্নীতি, অনিয়ম ও নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ আনা হয় আহমদ শফি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে আহমদ শফীর। যার পরিণতিতে গত জুনে তাকে হেফাজত হেডকোয়ার্টার থেকে আউট হয়ে যেতে হয়।

এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠেন কওমিপন্থী তরুণরা। বাদ-বিবাদে জড়ান তারা। বিশেষ করে আনাস মাদানীসহ শফীর কয়েকজন অনুসারী ছিলেন সমালোচনার কেন্দ্রে। তারই চূড়ান্ত পরিণতি হিসাবে বুধবার দুপুর থেকে উত্তাল হতে থাকে হাটহাজারী মাদ্রাসা। আনাস মাদানীর অপসারণসহ কয়েক দফা দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। খুব বেশি বিস্ময় তৈরি না করে দাবিতে এটাও দেখা যায়, বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফীকে অপসারণ করে যোগ্য ব্যক্তিকে যেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। রাতে আনাস মাদানীকে অপসারণের ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তবে গতকালও দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে। সন্ধ্যার দিকে মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। সবমিলিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
১৩ দফার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া হেফাজতে ইসলাম গত কয়েক বছর ধরেই নানা কারণে আলোচনায় ছিল। প্রায় সব মহলই হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। দেশে-বিদেশে অনেকের দৃষ্টিই ছিল সংগঠনটির দিকে। কার হেফাজতে হেফাজত এ প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে বারবার। কিন্তু হেফাজত সদর দপ্তরে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর সংগঠনটির ভবিষ্যতের প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে। কোন্‌ পথে যাচ্ছে হেফাজত? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হেফাজত ধীরে ধীরে কার্যত দু’ ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহ আহমদ শফী, অন্যভাগের নেতৃত্বে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। হাটহাজারীর ঘটনা যে বিভক্তিকে আরো সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে অপসারণের পরও পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয় একবার। বাবুনগরী ও আনাস মাদানীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যে বৈঠকে দু’ জনে সমঝোতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি আদতে যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে যায়। বরং আরো খারাপ হয়েছে।

হেফাজত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত আদর্শগতভাবেই হেফাজতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। মৌলিক ইস্যুতে আহমদ শফী এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর চিন্তাধারায় ফারাক তৈরি হয়েছে। বাবুনগরীর সমর্থকদের অভিযোগ, অত্যধিক পুত্র স্নেহ আহমদ শফীকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। দীর্ঘদিন ধরেই ছেলে যা বলছে তিনি তাই করছেন। আর ছেলে আনাস মাদানী জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়ম ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে। অন্যদিকে, আল্লামা শফী সমর্থকদের অভিযোগ, জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতকে সরকারের সঙ্গে দান্দ্বিক অবস্থানে নিয়ে যেতে চান। ভুল পথে পরিচালিত করতে চান সংগঠনটিকে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সব মিলিয়ে হেফাজত এখন বিভক্তির পথে। যে কসমেটিক্স ঐক্য রয়েছে তাও হয়তো বেশিদিন টিকবে না। যদিও সংগঠনটির ভেতরে অনেকেই এখনো দাবি তুলছেন, শীর্ষ আলেমরা বসে যেন বিভেদ মিটিয়ে নেনে। আর এতে আহমদ শফী নিজেও ভূমিকা রাখতে পারেন নিজে পদত্যাগ করে।

Share this post

scroll to top