ক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
আবার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে এবং জটিল শারীরিক সমস্যা তৈরি করে।
প্রাণিজ খাদ্যে যেমন— ডিমের কুসুম ও মাংসে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। উদ্ভিদ জাতীয় খাবারে কোলেস্টেরল থাকে না। হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের কোনো একটি রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রক্তনালির গায়ে চর্বি জমার কারণে হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে যায়। সরু নালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে নিচের ১০ খাবার-
১) কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা : এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। তাই যারা হৃদরোগী তাদের কলিজা, মগজ বা নেহারি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত।
২) চিংড়ি : হৃদরোগীদের জন্যে আরেকটি বর্জনীয় খাবার হলো চিংড়ি। দেখা গেছে, ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিগ্রা কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়িমাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিগ্রা কোলেস্টেরল।
৩) মাছের মাথা-ডিম : রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম।
৪) ফাস্টফুড : আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জার্নালের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে যারা ফাস্ট ফুড খায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০% বেশি।
যারা একের বেশি অর্থাৎ দুই/তিন বার খায়, তাদের হার আরো বেশি- ৫০%। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে যারা চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৮০% এরও বেশি।
৫) ডিমের কুসুম : ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে। আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিগ্রা-র বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।
৬) ঘি-মাখন-ডালডা : প্রাচ্যের অভিজাত খাবারের তালিকায় ঘি-মাখন এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হলেও এতে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেইসঙ্গে আছে পালমিটিক এসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে—বলেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি। এর বদলে অলিভ অয়েল, সান ফ্লাওয়ার অয়েল বা মার্জারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭) নারিকেল : হংকং আর সিঙ্গাপুরের দুটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যত লোক হংকংয়ে মারা গেছে, তার অন্তত তিনগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে সিঙ্গাপুরে। গবেষকদের মতে, এর একটি কারণ হলো, সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের খাবারে নারিকেল ও পাম তেল ব্যবহারের প্রবণতা। নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদরোগীদের জন্যে ক্ষতিকর।
৮) অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার : ডিপ ফ্রাই খাবার মুখরোচক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে, তত তাতে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট। এমনও দেখা গেছে, একটা পর্যায়ে খাবারে আর কোনো ক্যালরিই অবশিষ্ট থাকে না। যেমন, মাংস বা কোনো কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর বুদবুদ উঠছে।
এর কারণ হলো খাবারটার ভেতরে যে পানিটা আছে, তেলে ছেড়ে দেয়ার ফলে তা বেরিয়ে এসেছে এবং তেলের তাপ এবং চাপে তা শুকোতে শুরু করেছে। ডিপ ফ্রাই হতে হতে পানি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, বুদবুদ ওঠাও তখন বন্ধ হয়ে যায়।
খাবারের ভেতরে পানির বদলে তখন ঢুকে যায় তেল। তো এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচারেটেড ফ্যাট, তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে তার ফ্যাটের পরিমাণ আরও বাড়ে।
৯) রেড মিট : অতিমাত্রায় রেডমিট হৃদরোগের কারণ-এটা নতুন তথ্য নয়। তবে সেটা যে কেবল রেডমিটের ফ্যাট বা কোলেস্টেরলের কারণে তা কিন্তু নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা আছে।
১০) কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম : এর প্রতিটি খাবারই চিনিযুক্ত। আর চিনি হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি মানুষটি দেখতে মোটাসোটা না হলেও। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে বলা হয়, হৃদরোগের সঙ্গে চিনির সম্পর্কটা ঠিক কোথায় তা বোঝা না গেলেও এটা দেখা গেছে যে, মিষ্টি জাতীয় পানীয় ব্লাড প্রেশারকে বাড়িয়ে দেয়। বাড়িয়ে দেয় লিভারের তৎপরতা, যা রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট নিঃসরণ করে। আর এ দুটি কারণই হৃদরোগের নেপথ্য অনুঘটক।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন— গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি।
তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে এসব প্রাণী থেকে তৈরি খাদ্য আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিন। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন। হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে। সূত্র: কোয়ান্টাম মেথড