বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে মুকুটহীন নবাব বলে সম্মানিত ছিলেন তিনি। সাদাকালো নবাব সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে আনোয়ার হোসেনের অভিনয় আজও হৃদয়কে কাঁপিয়ে যায়, দুলিয়ে যায় মন। তিনি ১৯৪০ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে তিনি জামালপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষে অভিনয় করেন আসকার ইবনে শাইখের পদক্ষেপ নাটকে। সেই অভিনেতার আজ মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করছেন আজ ভক্ত-অনুরাগীরা।
২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত একটা ৩০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
স্বামীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার সবার দোয়া চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা অমিত হাসান। তিনি জানান, ‘আনোয়ার হোসেনের ছেলেমেয়েরা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে স্থায়ী হয়ে আছেন। তারা চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না খুব একটা।’
অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ১৯৩১ সালে ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনে তিনি আসকার ইবনে সাইকের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালীন তিনি অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। আনোয়ার হোসেন তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। এটাই আনোয়ার হোসেনের অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র।
২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি ৫শ’র অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ভাত দে’সহ পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি বাংলার মুকুটহীন নবাবে পরিণত হন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাচসাস, পাকিস্তানের নিগারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গুণী এ অভিনয়শিল্পী।
‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পান। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অকৃত্রিম অবদানের জন্য রাষ্ট্র তাকে ১৯৮৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানা একুশে পদক প্রদান করে।