দুই মাস আগে বসতবাড়ি হারিয়েছেন বিবি খাদিজা (৪২)। এর আগেও দুই দফায় মেঘনায় বিলীন হয় তার সব। স্বামী ইট ভাটায় কাজ করে। সব হারিয়ে চার সন্তান, স্বামীসহ আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধে।
বিবি খাদিজা জানান, বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়ার কয়েকদিন পরই চতলার স্লুইস গেটটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভেঙে যায় বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ। এখন জোয়ারের পানি চলে আসে তার ঘরে। এক মাস পরই হয়তো ভেঙে যাবে থাকার ঘরটি।
তিনি বলেন, ‘দিনে জোয়ারের পানি দেখতে পাই। কিন্তু ভয় রাতে। হঠাৎ রাতে পানিতে ভরে যায় ঘর। আতঙ্কে থাকি, কখন কী হয়।’
শুধু তিনি নয়। নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার উত্তারাংশে হরণী ইউনিয়নে তিন হাজার পরিবার বসত ভিটা হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। চতলার ঘাট এলাকার স্লুইস গেটটি বিলীন হওয়ায় ও মেঘনার ভাঙনে চেয়ারম্যান ঘাট, দক্ষিণ ইসলামপুর, মুফতি সমাজ, নয় নম্বর দাগ সমাজ, টাংকি সমাজ, ১০ নম্বর দাগ সমাজ, দিদারবাজার ও টাংকির বাজারসহ অন্তত ১০টি এলাকা বিলীন হওয়ার পথে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২৫ বছর আগে মেঘনার বুকে হরণি ইউনিয়ন জেগে ওঠে। ৯৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নকে সরকার চর উন্নয়ন বসতি স্থাপন প্রকল্পের (সিডিএসপি) মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলে। বেড়িবাঁধ, কৃষি ব্যবস্থা, বাজার ও সেচ প্রকল্প মিলিয়ে নদী ভাঙা হাজার হাজার পরিবারের আদর্শের বসতি হয়ে ওঠে এ জনপদ। কিন্তু গত ৮ বছর আগে থেকে শুরু হয় মেঘনার ভাঙন। আর এ ভাঙন তীব্রতা ধারণ করে ৩ বছর আগে। চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই বসতবাড়ি হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। এ নিয়ে গেল আট বছরে বাস্তুহারা হয়েছে অন্তত তিন হাজার পরিবার। অনেকে একাধিকবার ভাঙনের কবলে পড়ে হয়েছে নিঃস্ব।
হরণি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন জানান, স্লুইস গেটসহ বেড়িবাঁধেরও প্রায় ৫ কিলোমিটার বিলীন হয়েছে। প্রতিদিনই জোয়ারের পানি ঢুকছে বাড়ি-ঘরে। ভেসে গেছে খামারিদের মাছ। নষ্ট হয়েছে ফসলের ক্ষেত। এখন ৮ নম্বর কলোনিও বিলীন হওয়ার পথে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে ২৩টি সাইক্লোন স্লেল্টারসহ ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, সড়ক বিলীন হবে।
তিনি জানান, শুধু হরণি নয়, ভাঙছে হাতিয়ার সুখচর, নলচিরা ও চর ঈশ্বর ইউনিয়ন। প্রতিনিয়তই জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বেশিরভাগ গ্রাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন রোধে পাউবো একাধিক প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে নলেরচর-কেরিংচর ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকল্প বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।’
হাতিয়াকে রক্ষায় সুপার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এটা বাস্তবায়িত হলে শুধু হাতিয়া নয়, ভাঙন রোধ হবে সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার।’