করোনা সঙ্কট থেকেই তিনি বিতর্কিত, আলোচিত এবং সমালোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে যেমন অযোগ্যতার অভিযোগ রয়েছে, তেমনি তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। সিএমএসডি’র প্রয়াত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ বিদায়বেলায় এক চিঠি দিয়ে জনপ্রশাসন সচিবকে যে দুর্নীতির বিবরণ উল্লেখ করেছিলেন, সেই বিবরণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পুত্রের নাম রয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকে যাচ্ছেন বলেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
করোনা সঙ্কটের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা নিয়ে বিরক্ত এবং এই ব্যাপারে তিনি একাধিকবার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। তারপরেও যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতি-ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতায় হাবুডুবু খাচ্ছিল, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন এবং সেই অভিযানে প্রথম কাটা পড়েন সাবেক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. আবদুল মান্নানকে। এর আগে সিএমএসডি’র পরিচালককেও সরিয়ে দেওয়া হয় এবং নতুন পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুদ্ধি অভিযানের ধাক্কায় এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। সকলেই মনে করেছিল যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে শেষ পর্যন্ত সম্ভবত আরো শুদ্ধি অভিযান হবে এবং মন্ত্রীরও পরিবর্তন হবে।
মন্ত্রী পরিবর্তন নিয়ে একাধিক সময়ে গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী টিকে গেছেন। মন্ত্রী নিজেই এখন বিভিন্ন ব্যক্তিকে জানিয়েছেন যে, এই যাত্রায় তিনি বেঁচে গেছেন, তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। জানা যায় যে, ঈদের আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রায় ১৫ মিনিটের টেলিফোন আলাপ হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাঁকে সরে যেতে হবে। এটাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করছেন যে, এর মর্মার্থ ইতিবাচক। অর্থাৎ তাঁকে ভালো কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী সচিবই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেখানে শুধু সম্মতি জানাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক কিছু কর্মসূচীতে যোগদান ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোন নীতিনির্ধারণী কর্মপরিকল্পনা বা উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মসম্পাদন চুক্তিসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসছেন এবং নানা কথাবার্তা বলে সমালোচিত হচ্ছেন। কিন্তু নানা বাস্তবতায় এই মুহুর্তে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবর্তনটা যৌক্তিক বলে মনে করছেন না সরকার।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, সরকারের মধ্যে এক সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের জন্যে ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও পরবর্তীতে তা থমকে গেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ দিলে তাঁকে প্রথম থেকে আবার শুরু করতে হবে। এর ফলে করোনা সঙ্কট এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বাঁধাগ্রস্ত হবে।
দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে ভুলগুলো করেছেন সেই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবেন। তিনি ৬ বছরের বেশি সময় ধরে এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। কাজেই তাঁকে আরেকটি সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কারো কারো ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তৃতীয়ত এখন এই মুহুর্তে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করা হলে করোনা মোকাবেলায় বিরোধী দলের যে সমালোচনা হচ্ছে সেগুলো মেনে নেওয়া হবে। বাস্তবে করোনা মোকাবেলায় কিছু ব্যর্থতা-দুর্নীতি থাকলেও সার্বিকভাবে করোনা মোকাবেলায় সরকার খুব একটা খারাপ করেনি বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে, করোনা চিকিৎসাসেবা দান এবং মৃত্যু হার কম রাখার ক্ষেত্রে সরকার ভালো কাজ করেছে বলেও সরকারের কেউ কেউ মনে করে। একইভাবে করোনা পরিস্থিতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গর্ব করার মতো এবং বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে বলেই মনে করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে বিরোধী দলের হাতে কোন কার্ড দিতে চায় না সরকার। এর মাধ্যমে সরকার করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছে এমন সমালোচনার বোঝাও কাঁধে নিতে চায় না। আর এই জন্যেই অনেকে ধারণা করছেন যে শেষ পর্যন্ত হয়তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকেই গেলেন।