বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে করোনার সংক্রমনের মরণ ছোবলে মানুষ যখন ভীত ও উদ্বিগ্ন তারপরও মানুষের মুখ বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হিড়িক চলছে। বর্তমান নিপীড়নমূলক এই মামলা দেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভঙ করছে।
আজ বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করায় গত তিন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্কুলের শিক্ষার্থী, নারীসহ প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে ভালুকার একজন ১০ম শ্রেণীর কিশোর শিক্ষার্থীও রয়েছে। মানিকগঞ্জের বিএনপি নেতার কন্যা মাহমুদা পলিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আজ কয়েক মাস ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এই করোনার দুর্যোগকালে দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। দেশবাসীর কোনো স্বাধীনতা নেই, তাদের নাগরিক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব একটা পরিমার্গ আছে, সেটি হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সহ্য না করা। তাদের ঐতিহ্যই হচ্ছে ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের আলোকে কেড়ে নিয়ে নিজেদের দলীয় শাসনকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা। এখানে ভিন্ন দল ও মতের অস্তিত্বকে তারা কোনোক্রমেই মেনে নিতে পারে না। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্র অভিন্ন একটি সত্তা। তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই তারা মনে করে দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর আওয়ামী লীগ একসাথে চলতে পারে না। মূঢ় অহমিকা ও মিথ্যা প্রচারে এরা অক্লান্ত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের কাছে নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উপস্থাপন করে তারা। আওয়ামী লীগ কোনোদিনই সহিষ্ণুতার শিক্ষা গ্রহণ করেনি। মূলত দুর্নীতির বহুদৈত্যকার কেলেংকারীর কথা যেন মানুষ জানতে না পারে এই জন্যই মুক্তচিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। শাসকের বিরোধিতা করার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধিতা করা নয়, আর এজন্য নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ড্রাকোনিয়ান আইন প্রয়োগ করা গুরুতর অন্যায় ও পাপ।
রিজভী আরো বলেন, দেশে এখন কোটি কোটি মানুষ বেকার। সুদে টাকা নিয়ে বাড়িভাড়া পরিশোধ করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ আর সরকারের মুখে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। যাদের জন্ম ঢাকায় তারাও এখন গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে। নিন্ম আয়ের মানুষদের উপার্জন বন্ধ থাকায় বৌ-বাচ্চাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন মন্ত্রীরা বলছে- বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছে, এই উন্নয়ন গেলো কোথায়? এই ধানের মৌসুমেও মোটা চালের কেজি ৪০-৪৫ টাকা এবং শাক-সবজির দাম হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে স্বল্পআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ অভুক্ত ও বিনা চিকিৎসায় ভুগছে। মানুষের ঘরে এখন খাদ্য নেই, চিকিৎসার সামর্থ্য নেই ফলে ঋণ করে সুদের টাকা নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ইতোমধ্যে ৩০-৪০% মানুষ ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে, ফলে বিপাকে পড়েছে বাড়িওয়ালারাও।