রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে জাতিসঙ্ঘের সাথে মিলে কাজ করতে চাপ দিতে দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে নিরাপত্তা পরিষদ। ব্রিটেন এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করলেও চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা খসড়াটি নিয়ে আলোচনায় উপস্থিত থাকছেন না বলে রয়টার্সকে সোমবার বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন।
খসড়া ওই প্রস্তাবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া ও জবাবদিহিতার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিকেরা। এ বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব থআনে ব্রিটেন। মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার স্বেচ্ছামূলক-নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতেই ওই প্রস্তাব আনা হয়। কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে কয়েক দফায় আলোচনা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের উত্থাপিত প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর সাথে স্বাক্ষরিত মিয়ানমারের চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। জুনে মিয়ানমারের নেপিডোতে ওই সমঝোতাচুক্তি স্বাক্ষর হয়। ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে চুক্তিটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক এবং মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারী নাট ওৎসবি। এক সংবাদমাধ্যমকে সে সময় তিনি জানান, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিবেশ গড়ে তোলার কাজে সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি মিয়ানমার সরকারের সাথে সমঝোতাস্মারকটি স্বাক্ষর করেছে।’
ব্রিটেনের খসড়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তাদের নিয়মিত নিরাপত্তা পরিষদের কাছে রিপোর্ট করার তাগিদও দেয়া হয়েছে এতে। তবে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় চীন-রাশিয়ার অনুপস্থিতি একে সংশয়ের মুখে ফেলেছে। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া সোমবার রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার কাছে এটি যথাযথ সময়োপযোগী ও অর্থপূর্ণ কিছু মনে হয়নি।’ চীনা দূত মা ঝাওজু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সংস্থাটিতে নিযুক্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধিও তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন।
রাখাইনে আরো উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার দাবি জাতিসঙ্ঘের
এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরো উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার দাবি করেছে জাতিসঙ্ঘ। দুই প্রতিনিধির পাঁচ দিনের রাখাইন সফরের অভিজ্ঞতায় দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে এমন আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের দুই সংস্থা। একই সাথে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ৩৫টি স্থাপনা তৈরির অনুমোদন দেয়া মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের পর গত ১৩ ডিসেম্বর ‘স্মল স্কেল কুইক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টস’ নামের এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ চায় ২৩ রোহিঙ্গা সংগঠন
তাছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ২৩ রোহিঙ্গা সংগঠন। রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দেয়ার পাশাপাশি নেইপিডোর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় নিয়ে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা হয়েছে বিবৃতিতে।
সু চির পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে দ: কোরীয় ফাউন্ডেশন
মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সু চিকে ২০০৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম মানবাধিকার সংগঠনের দেয়া পুরস্কার তারা প্রত্যাহার করে নেবে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতনের ব্যাপারে তার উদাসীনতার কারণে তারা এটি তুলে নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আয়োজকেরা এ কথা জানান।