পাকিস্তানে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ছয় বছর আটকে থাকার পর ভারতীয় এক তরুণ নিজ দেশে ফেরত এসেছেন।
হামিদ আনসারি নামের সে ব্যক্তিকে পাকিস্তানের ভুয়া পরিচয়পত্র সহ আটক করার পর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কিন্তু তার পরিচিত ব্যক্তিরা বলছেন, আনসারি পাকিস্তানে এক নারীর টানে সে দেশে ছুটে গিয়েছিলেন। যার সাথে হামিদ আনসারির অনলাইনে পরিচয় হয়েছিল।
তবে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার পর দু’জনের মধ্যে দেখা হয়েছিল কি না সেটি পরিষ্কারভাবে জানা যাচ্ছে না।
ভারতে আসার পর ওয়াগা সীমান্তে আনসারিকে গ্রহণ করে তার পরিবার।
সেখানে তখন সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরাও ছিলেন।
তার পরিবার গত এক বছর ধরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।
যদিও ২০১৫ সালে আনসারির কারাদণ্ড দেয়া হয়, কিন্তু তিনি ২০১২ সাল থেকেই পাকিস্তানের কারাগারে আটক ছিলেন।
গত রবিবার তাঁর কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে আরো কয়েকদিন সময় লেগেছে।
হামিদ আনসারি পরিচয় কী?
মুম্বাই কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ফৌজিয়া আনসারি এবং ব্যাংকার নিহাল আনসারির ছোট ছেলে হামিদ আনসারি।
২০১২ সালে ৩৩ বছর বয়সী হামিদ আনসারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
তখন তিনি পরিবারকে জানান যে, একটি বিমান সংস্থায় সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য তিনি আফগানিস্তানে যাচ্ছেন।
কিন্তু আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছানোর কয়েকদিন পরেই নিখোঁজ হয়ে যায় হামিদ আনসারি।
তিনি পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখেন।
এরপর বাড়িতে থাকা আনসারির কম্পিউটার থেকে তার পরিবার জানতে পারে যে ইমেইল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আনসারি পাকিস্তানের কয়েকজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখছিলেন।
তারপর আনসারির মা-বাবা বুঝতে পারেন যে তিনি পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থান করছেন।
কেন তিনি পাকিস্তান গিয়েছিলেন?
হামিদ আনসারি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ছয় মাস আগে মুম্বাই-এর মানবাধিকার কর্মী জিতেন দেশাই-এর সাথে দেখা করেন।
তখন তিনি পাকিস্তানের ভিসা পাওয়ার জন্য দেশাই-এর সহায়তা চান।
আনসারি বলেন, তিনি পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশের এক নারীকে বিয়ে করতে চান যার সাথে তার অনলাইনের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে।
দেশাই মুম্বাই মিরর পত্রিকাকে বলেন, “একথা শুনে আমি ভীষণ হেসেছিলাম। যেখানে পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য নারীদের হত্যা করা হয় সেখানকার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় সে। আমি তাকে বলেছিলাম এসব পাগলামি বাদ দিয়ে ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেয়ার জন্য।”
কিন্তু পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আনসারি।
তিনি তখন পাকিস্তানের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা বলে, আফগানিস্তান থেকে সহজে পাকিস্তানে ঢোকা যাবে।
তারপর আফগানিস্তানে গিয়ে হামজা নাম দিয়ে পাকিস্তানের ভুয়া পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সেখানে প্রবেশ করেন আনসারি।
পরবর্তীতে কাগজপত্রে দেখা যায় যে একটি হোটেল থেকে আনসারিকে আটক করা হয়।
কীভাবে মুক্তি পেলেন তিনি?
আনসারির পরিবার যখন পাকিস্তানে তার অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছিলেন না তখন তারা সরকারি কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার কর্মীদের সাহায্য নেন।
এদেরে মধ্যে একজন হলেন দেশাই, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকদের পরস্পরের কারাগার থেকে মুক্ত করার কাজ করে আসছেন।
পাকিস্তানের একজন সাংবাদিক হামিদ আনসারির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পক্ষ হয়ে আদালতে একটি নিখোঁজ পিটিশন দায়ের করেন।
হামিদ আনসারির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করতে সেই সাংবাদিক পাকিস্তান সরকারকে উৎসাহিত করেন।
ফলে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো স্বীকার করে, আনসারিকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং সে কারাগারে আটক আছে।
গত ছয় বছরে আনসারির সাথে ভারতের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি।
তাকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিকে পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের একটি মানবিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে।