সুশান্ত সিং রাজপুতকে বলিউড অভিনেতা হিসেবেই চিনতো সবাই। যদিও তার দক্ষতা শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। কোয়ান্টাম ফিজিক্স, স্টোইসিজম এবং অ্যাস্ট্রোলজিতেও অগাধ জ্ঞান ছিল তার।
সম্প্রতি এক খবরে জানা গেছে, সুশান্ত চাঁদে জমি কিনেছিলেন। জমির নাম ‘সি অব মাস্কোভি’। এমন খবর সামনে আসতেই চাঁদে কীভাবে জমি কিনতে হয়, কোনো ব্যক্তির পক্ষে চাঁদে জমি কেনা সম্ভব কিনা- এ সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার গতিও বেড়ে গেছে। তবে প্রশ্ন হলো- আসলেই কি চাঁদে জমি কেনা যায়? কীভাবে সম্ভব? এটা কি বৈধ? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা যাবে এই লেখায়।
ছেলেবেলায় আমাদের কল্পরাজ্যে চাঁদের বুড়ির অবয়ব তৈরি করে দেওয়া হয়। শিশুমন ধরেই নেয়- চাঁদের মালিক হলো সেই বুড়ি। সেখানে বসে চরকায় সুতা কাটা তার একমাত্র কাজ! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে চাঁদ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যেহেতু এখন অনেকেই চাঁদে এক টুকরো জমির মালিকানার কথা ভাবছেন, তাই জেনে রাখা ভালো- চাঁদে জমি বিক্রি অবৈধ।
১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। ‘দ্য আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামক এই চুক্তি আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। চুক্তিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে সেগুলো কোনো দেশ দখল বা নিজেদের একক সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ১১০টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। পাঠক এই ফাঁকে আপনাকে জানিয়ে রাখি, আরো ২৩টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও করোনাজনিত কারণে সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাদের স্বাক্ষর অনুমোদনের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
১৯৭৯ সালে চাঁদ এবং মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ; যেটি ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। সেখানে মূল বিষয়গুলো ছিল, এসব কর্মকাণ্ড হতে হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং কোনো মহাকাশ স্টেশন বানাতে হলে আগে জাতিসংঘকে জানাতে হবে। ওই চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, চাঁদ এবং এর যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পত্তিতে মানব সভ্যতার সবার সমান অধিকার থাকবে। তবে সমস্যা হলো, মাত্র ১১টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়ার মতো মহাকাশ গবেষণার প্রধান দেশগুলো চুক্তিটি সমর্থন করেনি।
বলা হয়ে থাকে, চুক্তির ফাঁক কাজে লাগিয়ে চাঁদে জমি বিক্রি হচ্ছে। ১৯৬৭ সালে চুক্তির একটি ফাঁক খুঁজে বের করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। চুক্তিতে লেখা ছিল, কোনো রাষ্ট্র চাঁদের মালিকানা দাবি করতে পারবে না। কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে, কোনো সাধারণ মানুষ মালিকানা দাবি করতে পারবে না। ১৯৮০ সালে এই সুযোগটি প্রথম কাজে লাগান ডেনিস হোপ। আমেরিকান আইন অনু্যায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি মালিকবিহীন সম্পদের মালিকানা দাবি করে, অন্য কোনো ব্যক্তি সেই সম্পদে দাবি না রাখে এবং দলিলে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা স্বাক্ষর করে তাহলে সেই ব্যক্তি উক্ত সম্পদের মালিক হবে। হোপ চাঁদের মালিকানার ডকুমেন্ট তৈরি করে কৌশলে তা স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং নিয়ম অনুযায়ী চাঁদের মালিক হিসেবে জমি বিক্রি শুরু করেন। হোপের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘লুনার এম্বেসি কমিশন।’ এছাড়া ‘দ্য লুনার রেজিস্ট্রি’, ‘লুনার ল্যান্ড’সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চাঁদে জমি বিক্রির অফার দিচ্ছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে পাস করা একটি বিলের ধারা কাজে লাগিয়েও জমি বিক্রির কাজটি করা হচ্ছে। ওই বিলে বলা হয়েছে, মহাকাশে আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন নাগরিক আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে গ্রহাণু বা মহাকাশের কোনো স্থানের মালিকানা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুবিধা পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকরা এক্ষেত্রে চুক্তির মাধ্যমে চাঁদ বা অন্যান্য স্থানের মালিকানা সুবিধা পাবে।
তবে আশার কথা এই, বিলটি মার্কিন সংসদে পাস হয়নি। তারপরও কি আপনি চাঁদে জমি কিনতে পারবেন? উত্তর হচ্ছে- না। কারণ আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কেউ চাঁদের মালিকানা দাবি করবে পারবে না, বা চাঁদকে নিজের সম্পত্তি মনে করা যাবে না। যদিও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করছে- তারা চাঁদে জমি বা প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু এই জমির ভবিষ্যৎ কি তা স্পষ্ট নয়। এরপরও চাঁদে জমি কিনবেন কিনা সিদ্ধান্ত আপনার।