ভ্রমণ সারা বছরের জন্য। তবে শীতকালে ভ্রমণের আনন্দ অন্যরকম। এর অন্যতম কারণ ডিসেম্বরের ছুটি। তখন বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনসহ দলবল নিয়ে অনেকেই বেড়াতে যান। এ সময় কারও পছন্দ পাহাড়, কারও সমুদ্র, আবার কারও সমতলের সবুজ। এর সবকিছুই রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারে। এবং এখনই হচ্ছে কক্সবাজার বেড়ানোর আদর্শ সময়। সামুদ্রিক আবহাওয়ার জন্য ঠান্ডার প্রকোপ তুলনামূলক কম সেখানে। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এক নজরে জেনে নিন কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান।
কক্সবাজার শহরের প্রাচীন ঐতিহ্য আজগবি মসজিদ, অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং, বার্মিজ মার্কেট, রাডার স্টেশন, হিলটপ সার্কিট হাউজ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি পাহাড়, ঝরনা ও সমুদ্র সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রাবার বাগান, চকরিয়াস্থ ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টেকনাফের সমুদ্র সৈকত, মাথিনের কূপ, সেন্টমাটিন প্রবালদ্বীপ, ছেঁড়াদ্বীপ, মহেশখালী জেটি, আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া বাতিঘর, উখিয়ার ইনানী পাথুরে সৈকত, কানা রাজার সুড়ঙ্গ, মেরিন ড্রাইভ রোডের সৌন্দর্য ও সাগরতলের অজানা রহস্য রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড।
কক্সবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য আজগবি মসজিদ। এটি শাহ সুজার আমলে তৈরী হয়েছিল। ‘চৌধুরী পাড়া মসজিদ’ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তর দিকে মসজিদটি অবস্থিত। রিকশা বা টমটম গাড়িতে যাওয়া যায়। কক্সবাজার পৌরসভার গেইট থেকে ভাড়া পড়বে ৭০ টাকা।
কক্সবাজার শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশি বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগী ক্যাং সবচেয়ে বড়। শহরের প্রবেশদ্বারেই এর অবস্থান। দীর্ঘ আকৃতির সব বৃক্ষের ছায়ার নিচে গম্ভীর ভাবমূর্তি আপনাকে বিনম্র হতে বাধ্য করবে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, কাঠের কলামগুলোতে খোদিত হয়েছে বুদ্ধের অসাধারণ সব প্রতিকৃতি। সংরক্ষিত রয়েছে বহু পুরনো হস্তলিপি। আরও সংরক্ষিত রয়েছে চুনাবালি ও ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধের মূর্তি। সাধারণ কিছু রীতি-নীতি মেনে যে কেউ ঘুরে দেখতে পারেন।
হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়া থেকে সাগর ও পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য
হিলটপ সার্কিট হাউসের দক্ষিণ পাশের চূড়ায় কক্সবাজার রাডার ষ্টেশনের অবস্থান। এখান থেকেই দেশব্যাপী ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়। রাডার যন্ত্রটি সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় ১৯৬৮ সালে স্থাপন করা হয়। পরবর্তী কালে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় তা আধুনিকীকরণ করা হয়।
জেলা পরিষদ ভবনের পশ্চিম দক্ষিণে পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম পরিবেশে হিলটপ সার্কিট হাউসের অবস্থান। অল্প সময়ের জন্য হলেও ভারতের দার্জিলিং-এর মত মনে হবে। এর চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ ও পর্যটন নগরীর টপভিউ অবলোকন করা সম্ভব।
কক্সবাজারে লাবনী সৈকতের জনপ্রিয়তা অনেক উপরে। অনেকে কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর সৈকত বলেন এটিকে। থাকা-খাওয়া, যানবাহন থেকে শুরু করে প্রায় সবই এখানে হাতের কাছে পাবেন। অর্থাৎ যে কোনো মানের সার্বিক ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। নিকটেই শত শত ছোট দোকান। সেখানে ঝিনুকের তৈরি উপহার সামগ্রী ও অলঙ্কার বিক্রি হয়। এ ছাড়াও পাওয়া যায় সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ সহযোগী বিভিন্ন উপকরণ। এই সৈকতে সার্ফিং করা ও বীচ বাইক চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
সমুদ্র স্নানের প্রকৃত স্বাদ নিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সুগন্ধা সৈকত ভ্রমণ করে। সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি স্কি-বোটে করে ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছাটিও পূরণ করা যায় এখানে। রাস্তার দুপাশে সামুদ্রিক তাজা মাছের হরেক পদ পরখ করে দেখার শখ কিন্তু অনেকেরই থাকে। এখানে সেই শখ মিটবে আপনার। এই সৈকতে চাঁদের আলোয় হাঁটার চমৎকার পরিবেশ রয়েছে।
রামুর উত্তর মিঠাছড়িতে বুদ্ধের ১০০ ফুট দীর্ঘ শয়ন মূর্তি
পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর, পূর্বে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই পথ ধরে কক্সবাজার থেকে আট কিলোমিটার এগিয়ে গেলে নজরে পড়বে সবুজশ্যামলে ভরা একটি গ্রাম বড়ছড়া। এই বড়ছড়ার উঁচুনিচু বিশাল পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনের বিনোদন কেন্দ্র দরিয়ানগর। দরিয়ারগরে উঁচু পাহাড়ের নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ, নাম শাহেনশাহ গুহা। এছাড়া ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় ছন আর কাঠ দিয়ে তৈরি চেরাংঘর বা আড্ডাখানা। এখানে বসে দেখা যাবে দরিয়া। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হবে, যেন বঙ্গোপসাগরের নীল জলের ওপরই দাঁড়িয়ে আছেন। এছাড়া দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেলিং করারও সুযোগ রয়েছে।
দৃষ্টি যত দূর যায়, আকাশ আর সমুদ্র মিশে একাকার। তারই এক পাশ দিয়ে ছুটে চলে গাড়ি। পথের আর এক পাশে সুদীর্ঘ পাহাড়। কক্সবাজার থেকে দক্ষিণে ১৫ কি.মি. দূরে হিমছড়ির অবস্থান। এবার ভেবে দেখুন, নিরিবিলি সেই সড়কে ছুটছে আপনাকে বহনকারী জিপ অথবা ব্যক্তিগত গাড়ি। হিমছড়ি একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। একইসঙ্গে শুটিং স্পট। এখানে একটি ঝরনাও রয়েছে। হিমছড়ির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর যাত্রাপথের সৌন্দর্য।
নীরব পরিবেশই ইনানী সমুদ্র সৈকতকে অধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। দীর্ঘ সৈকতজুড়ে রয়েছে সোনালী বালু। স্বপ্নের মত পরিবেশ বলতে যা বোঝায় ইনানী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সৈকতের পাশ দিয়ে বহু পুরনো কোরাল বোল্ডার (পাথর)। ধরুন কোনো একটি বোল্ডারে একাকী কিছুক্ষণের জন্য বসেছেন, অমনি ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল আপনার সামনে। ফিরে যাওয়ার সময় সেই ঢেউ বালুকাবেলায় রেখে গেল নানা রঙের বাহারী সব ঝিনুক। ঢেউ পাথরের খেলা ইনানীতে নিত্তদিনের বিষয়। এখানকার সূর্যাস্ত যে কারোর হৃদয় ভরিয়ে দেবে মুগ্ধতায়। এই সৈকত কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে ৩২ কি.মি. দূরে উখিয়ায় অবস্থিত।
কানা রাজার সুড়ঙ্গ উখিয়া থানার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ারটেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে। সুড়ঙ্গে একটা বড় ট্রাক অনায়াসে প্রবেশ করতে পারবে। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের কানা রাজার (এক চোখ অন্ধ) শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছিল।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেলিং
কক্সবাজারের নিকটতম উপজেলা রামু। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত রামু। এখানে একাধিক মন্দিরে রয়েছে বুদ্ধের মূর্তি। মহামূল্যবান পাথর, ব্রোঞ্জ ও সোনার তৈরি মূর্তিও রয়েছে। ছয় ফুট উঁচু ভিত্তির উপর স্থাপিত রয়েছে গৌতম বুদ্ধের তেরো ফুট দীর্ঘ ব্রোঞ্জ মূর্তি। আপনি অবাক হবেন যখন জানতে পারবেন এটিই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্রোঞ্জের বুদ্ধ মূর্তি। রাংকুট বনাশ্রমে সংরক্ষিত রয়েছে সম্রাট অশোকের সময়কার বুদ্ধ মূর্তি। উত্তর মিঠাছড়ির বন বিহারে সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে বুদ্ধের ১০০ ফুট দীর্ঘ শয়ন মূর্তি।
সারি সারি পাহাড় আর সমুদ্র ঘেরা দ্বীপ মহেশখালীতে দেখার আছে অনেক কিছুই। শুধু সাগর ঘেরা দ্বীপ হিসেবে নয়, সেখানকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দির, লবণ ও চিংড়ি চাষ, শুঁটকি মহাল ও রাখাইন প্যাগোডা আর প্রাকৃতিক মুক্তা আহরণও আকর্ষণ করবে পর্যটকদের। শুধু পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখেই পর্যটকদের স্বাদ মেটার কথা নয়। তাই স্বাদ বদলাতে ঘুরে আসতে পারেন মহেশখালী দ্বীপ থেকেও। কক্সবাজার থেকে মহেশখালী যাওয়ার একমাত্র উপায় ট্রলার ও স্পীডবোট। ট্রলারে সময় লাগে এক ঘণ্টা। স্পীড বোটে গেলে অবশ্য সময় লাগে ২০ মিনিট। তার আগে অবশ্য আপনাকে রিকশা নিয়ে ৬নং ঘাটে যেতে হবে, সেখান থেকে ট্রলার বা স্পীড বোট মেলে। এর নিকটেই রয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপ। দ্বীপটি পাখির অভয়ারণ্য বলে পরিচিত। মহেশখালীতে ঘুরে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দেয়া যেতে পারে সোনাদিয়া। মাছ ধরা প্রত্যক্ষ করা ও জেলে পল্লীর জীবনচিত্র সোনাদিয়ার প্রধান আকর্ষণ। সকালে রওনা হয়ে কক্সবাজার থেকে মহেশখালী হয়ে সোনাদিয়া ঘুরে এক দিনেই আবার কক্সবাজার ফিরে আসা সম্ভব।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সাফারি পার্ক এটি। কক্সবাজারের ডুলাহাজরায় এর অবস্থান। পার্কজুড়ে রয়েছে বয়লাম, গর্জন, তেলশুর এবং চাপালিশসহ নানা প্রজাতির গাছ। পশুপাখিও রয়েছে প্রচুর! উন্মুক্ত স্থানে বন্যপ্রাণির বিচরণ আপনাকে মুগ্ধ করবে। পার্কের অভ্যন্তরে বিশেষ বাস অথবা জিপে করে সেগুলো দেখার সুযোগ পাবেন আপনি। পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা এই পার্কের আয়তন ২,২২৪ একর। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াতও সহজ। যে কারণে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি তথ্য পাঠকদের জানিয়ে রাখি, ডুলাহাজরাতেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এটি দেশের প্রথম সাফারি পার্ক। এখানে রয়েছে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, হাতি, নীলগাই, জেব্রা, জিরাফ, সাম্বার হরিণ, বাঁশভালুক, বন্যশুকর, চিত্রা ও মায়াহরিণ, প্যারাহরিণ, অজগর, বনমোরগ, গয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ভারতীয় বনরুই, সজারু, স্প্রংবক, কুদু, উল্লুক, খেঁকশিয়াল, উড়ন্ত কাঠবিড়ালী, বড়বেজী, সাপের বিভিন্ন প্রজাতি, মিঠা পানির কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম, হাজারো রকমের বিরল গাছপালা আরো অনেক প্রাকৃতিক জীবজন্তু।
মহেশখালীতে পাহাড়ের উপর অবস্থিত আদিনাথ মন্দির
ঔপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য উনবিংশশতাব্দীর প্রথমদিকে এসআই হয়ে টেকনাফ থানায় বদলী হয়ে এসেছিলেন। তখন টেকনাফের নাম করা রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্যা মাথিনের প্রেমে পড়েন। কিন্তু পরিণয়ের আগেই মাথিনের মৃত্যু হয়। বিচ্ছেদের জ্বালায় তিলে তিলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে সে। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফ থানা প্রাঙ্গনে কুপের অবস্থান। সেখানে প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা রয়েছে।
টেকনাফ থানা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সমুদ্র গর্ভে মনোরম দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আনুমানিক ১৬ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এ দ্বীপের মূল আকর্ষণ সৈকতজুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা, সমুদ্র তীরে সারি সারি নারিকেল গাছ, দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া নীল জলরাশি। এ দ্বীপের অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। রাতে এ দ্বীপটির সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণে। পূর্ণিমা রাতে সেন্টমার্টিন যেন আরো বেশি সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে বসে ভ্রমণার্থীদের জন্য। নীল পানি ঘেরা এই মনোরম দ্বীপে সরাসরি কোন সড়ক পথ নেই। যেতে হবে নদী পথে লঞ্চ, টলার, নৌকা বা জাহাজে করে। একসময় টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যেতে হতো কাঠের নৌকা কিংবা রেসকিউ বোটের মাধ্যমে। কিন্তু এখন ৮টি জাহাজ চলাচল করে।
স্বচ্ছ জলরাশি আর প্রবাল পাথরের বিন্যাস নিয়ে ছোট দ্বীপ, ছেঁড়াদিয়া। সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির প্রবাল পাথর ও নির্জনতা কাছে টানে পর্যটকদের। তাই এখানে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। পর্যটকরাও মুগ্ধ, দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে। মূলত জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে এমন নাম হয়েছে দ্বীপটির। এটি দেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ ভূখণ্ড। নীল জলরাশির মাঝখানে প্রবাল পাথরের তৈরি দ্বীপটি। প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর, ঝিনুক, শামুকের খোলস, চুনাপাথর। স্বচ্ছ পানির উত্তাল স্রোতের আঘাতে এসব পাথরের গায়ে খচিত হয়েছে বৈচিত্র্যময় সব নকশা। তাই সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে আধঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে অনেকেই ছুটে যান নির্জন এই দ্বীপে।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টনের অপরূপ দৃশ্য
কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মেরিন ড্রাইভ রোড অন্যতম। কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে এই সড়ক চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্ত। বিস্তৃতি ৮০ কিলোমিটার। কক্সবাজারের এই রাস্তাটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড। এখানে দেখা যায়, একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্রের বিশাল জলরাশির খেলা। খোলা আকাশ ও সমুদ্রের ঢেউয়ে মন হারানো নাবিকের কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড এক অন্যতম আকর্ষণ। পথ ধরে হাঁটলে কিংবা জিপে চড়লে মনে হবে চিরায়িত সেই গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো’।
কক্সবাজারে নতুন একটি বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তা হলো রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড। রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত। এটি আন্তর্জাতিক মানের ফিশ অ্যাকুরিয়াম। এখানে রয়েছে প্রায় একশো প্রজাতির বিরল প্রকৃতির মাছ। লোনা পানি ও মিঠা পানির মাছসহ বিদেশি মাছও রয়েছে। রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে ঢুকতেই পর্যটকদের স্বাগত জানায় দৈত্যাকার দুটো ব্ল্যাক পিরানহা। পাশে রয়েছে কঙ্কাল। সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে সামনে এগুলেই হাতের বামে, ডানে এমনকি মাথার উপরেও মাছের রাজ্য চোখে পড়বে। স্বচ্ছ কাঁচের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় জলজ প্রাণীর জীবন। এখানে গেলে মনে হবে গায়ের পাশে ঘুর ঘুর করছে কাঁকড়া, কচ্ছপ, কুচিয়া, আউসসহ অন্যান্য প্রাণীরা।
এখানে আরো রয়েছে ছবি তোলার ডিজিটাল কালার ল্যাব, থ্রি নাইন ডি মুভি দেখার চমৎকার স্থান, প্রার্থনা কক্ষ, বিয়ে কিংবা অন্যান্য পার্টির জন্য কনফারেন্স হল, শিশুদের খেলাধুলার চমৎকার আয়োজন, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, শপিং করার জন্য আধুনিক শপ, দেশি ও বিদেশি হরেক রকম পাখি। আর রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করতে হলে দেশি পর্যটকদের ৩০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের ১০০০ টাকা গুণতে হবে।
যেভাবে যাবেন: বাসযোগে ঢাকা গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে কক্সবাজার ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। রাজধানী থেকে বাসে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। চাইলে রেলগাড়িতে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে কক্সবাজারও যেতে পারেন।
স্বচ্ছ জলরাশি আর প্রবাল পাথরের বিন্যাস নিয়ে ছোট দ্বীপ, ছেঁড়াদিয়া
আকাশ পথেও কক্সবাজার যাওয়া যায়। বাংলাদেশ বিমান, রিজেন্ট এয়ারলাইনস, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা প্রতিদিনই বিমান আসা যাওয়া করে। ঢাকা কক্সবাজার-ভাড়া ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন: কক্সবাজারে রয়েছে পর্যটকের জন্য সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ। যার মধ্যে অর্ধ-শতাধিক তারকা মানের হোটেল, ছোট-বড় দুই শতাধিক হোটেল ও মোটেল এবং দুই শতাধিক গেস্ট হাউজ, কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে। এখানে এক রাতের জন্য রয়েছে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা দামের কক্ষ।
সতর্কতা: কক্সবাজারে সমুদ্রস্নানের সময় জোয়ার ভাটার গতি প্রকৃতির প্রতি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। সামান্য অবহেলার কারণে ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। সাঁতারে দক্ষ না হলে সমুদ্রের বেশি দূর পানিতে না নামাই ভালো। সমুদ্রস্নানে দুর্ঘটনা এড়াতে পরামর্শ নিতে পারেন সী-সেইভ লাইফ গার্ড (ফোন: ০১৮৪৩৭২৩১৯১)। এছাড়া পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ (ফোন : ০১৭৬৯৬৯০৭৩২/০১৭৬৯৬৯০৭৩৪)।