কাতারের পর মধ্যেপ্রাচ্যের আরেক ধনী দেশ বাহরাইনে বাংলাদেশীদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর জাল-জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু না। তবে কয়েক মাস আগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক মোয়াজ্জিনের হাতে বাইরাইনের নাগরিক একজন ইমাম খুন হন।
এ ঘটনার পরপরই দেশটির সরকার বাংলাদেশীদের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। যা গতকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। বাহরাইনে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী রয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ হাজারই অবৈধ শ্রমিক রয়েছে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র ও লেবার (শ্রম) মিনিস্ট্রি থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয়েছে।
বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) শেখ মোহাম্মদ তোহিদুল ইসলাম গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাহরাইনের শ্রমবাজার আপাতত বন্ধ আছে। কারণ হচ্ছে সর্বশেষ এ দেশে গত আগস্টে (২০১৮) বাইরাইনের নাগরিক এক ঈমাম খুন হয়েছেন। তাকে খুন করেছেন বাংলাদেশী মোয়াজ্জিন। ঈমামকে মেরে মোয়াজ্জিন তার লাশ ছয় টুকরো করে ফেলেন। বাহরাইন সরকার বিষয়টি জানার পরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এরপরই দেশটির সরকার কমপ্লিটলি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি বলেন, আসলে এসব ঘটনায় তারা কখনো অফিসিয়ালি কিছু জানান না। তবে এ ঘটনার পর আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। বাংলাদেশীদের তারা ভিন্ন চোখে দেখছে। যদিও মোয়াজ্জিনের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এক্সিকিউশন হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরে হয়তো আমরা চেষ্টা করতে পারব শ্রমবাজার খুলে দেয়া ব্যাপারে। বাংলাদেশী মোয়াজ্জিনের নাম কামাল।
এক প্রশ্নের উত্তরে লেবার কাউন্সলের শেখ মোহাম্মদ তোহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মানামায় আল মিরজা রোড সংলগ্ন পুরনো একটি ভবনের একাংশ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ধসে পড়ে। এতে পাঁচ বাংলাদেশী নিহত ও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশী আহত হয়।
তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তারা কেউই ক্ষতিপূরণ পাবেন না। কারণ ওই ভবনে নিহত এবং আহতরা সবাই ছিলেন অবৈধ। উদারহণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাওরান বাজারের মূল সড়কে যেভাবে কাজের জন্য লাইন ধরে শ্রমিকেরা বসে থাকেন, ঠিক এখানেও প্রতিদিন কাজ খোঁজার জন্য রাস্তায় বাংলাদেশীরা বসে থাকেন। তারা প্রতিদিন ক্ষ্যাপ মারেন।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাসে যে আসবেন তাদের সবার জন্য দরজা খোলা। আমরা বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে বৈধ আর অবৈধ দেখি না। তিনি বলেন, বাহরাইন খুবই ছোট একটি দেশ। আমরা তাদের সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছি। যার কারণে তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক আছে।
আহত-নিহতদের অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা ২০১৬ সালে এ দেশে এসেছিলেন। এর মধ্যে কিছু এসেছেন ভিজিট ভিসায়। আবার কিছু কর্মী ওয়ার্ক ভিসায়ও এসেছেন। বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক ভিসাতেই মেক্সিমাম কর্মী এ দেশে আসেন। এর জন্য আমরাই দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশীরা মিডলম্যানের কাজ করতে গিয়ে প্রত্যেকেই ‘দালাল’ হয়ে যাই। একজন আসার পর তিনি আরো ১০ জনকে আনতে চান। তারা কিন্তু এভাবে ভিসা কিনে বাংলাদেশ থেকে লোকজন নিয়ে এলেও পরে তাদের আর কাজ দিতে পারে না। পরে যে কোম্পানির নামে লোক আসে তারা ভিসা বাতিল করে দেন। তখন থেকেই তারা অবৈধ হয়ে পড়েন। এভাবেই চলছে।
অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশী দুই লাখ হলে এর তিন ভাগের একভাগই অবৈধ। দেশটির সরকার আমাদের জানিয়েছে, বর্তমানে ৬৯ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী বাহরাইনে অবস্থান করছেন।
প্রায় ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নিচ্ছে না। সম্ভাবনা থাকার পরও মালয়েশিয়ায় এখনো নতুন করে শ্রমিক যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
একের পর এক শ্রমবাজার বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। যদিও তার দফতরের বহির্গমন শাখার অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে বহু শ্রমিক এখন বিপদের আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি জানার পরও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে ভুক্তভোগী রিক্রুটিং এজেন্সি ও বিদেশগামী শ্রমিকদের পাঠানো এজেন্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।