দেশে ৪০ লাখ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৬.১৭% ময়মনসিংহে

Bhumihinদেশে মোট খানার (একই রান্না খান যে সব সদস্য বা পরিবার) সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। যাদের কোনো ধরনের জমি নেই এমন ভূমিহীন (যে পরিবারের নিজস্ব কোনো জমি নেই) পরিবারের সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এমন ভূমিহীনদের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সিলেট বিভাগে ভূমিহীন পরিবারের হার সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে সব চেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের কৃষি শুমারি ২০১৯- এর প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিবিএস সূত্র জানায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ভূমিহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০১৯ সালে কিছুটা কমে এসেছে। ২০০৮ সালে ভূমিহীনতার হার ছিল ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ভূমিহীনতার হার ১৯৯৬ সালে ছিল ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ১৯৮৩ সালে ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

শহর এলাকায় ৫৯ লাখ ৮ হাজার ২০৫টি খানার মধ্যে ১৭ লাখ ৯১৯ পরিবার ভূমিহীন। শহরে ভূমিহীন পরিবারের হার ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে পল্লী এলাকায় ২ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৫ জন পরিবারের মধ্যে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৩ লাখ ২৩ হাজার ২৭০টি। তবে পল্লী এলাকায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা মাত্র ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বিভাগওয়ারী সর্বোচ্চ ভূমিহীন পরিবারের হার সিলেট ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ, এরপরেই ঢাকা বিভাগ ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ২৩, রাজশাহী ৭ দশমিক ৭৬, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ১৭, খুলনায় ৭ দশমিক ৩৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ভূমিহীন পরিবারের হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

শহরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভূমিহীন পরিবার রয়েছে ঢাকা শহরে (১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ)। ঢাকার পরে সিলেট বিভাগে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং খুলনায় ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে।

বিবিএস সূত্র জানায়, মহানগর এলাকাগুলোর আশপাশে নগরায়নের প্রবণতা বাড়ছে। পল্লী এলাকা থেকে শহর এলাকায় ভূমিহীন মানুষের অভিবাসনের কারণে প্রতিটি বিভাগে পল্লী এলাকায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা কমছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ভূমিহীন পরিবারের জন্য সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের সরকার মানবিক সরকার। ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর করে দেওয়া হচ্ছে, এই কাজ দেশব্যাপী শুরু হয়েছে। যাদের ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় সরকার ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে।

কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারি-২০১৯ স্বাধীন বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম ফর দ্য সেনসাস অব অ্যাগ্রিকালচার ২০২০ গাইডলাইন মোতাবেক এই কৃষি শুমারি পরিচালিত হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে সারা দেশে শহর ও পল্লী এলাকায় এটি বৃহৎ আকারে পরিচালিত অন্যতম পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়।

কৃষি শুমারির দ্বিতীয় জোনাল অপারেশনে সারা দেশের ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬টি এলাকায় গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এতে অংশ নেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৫ জন গণনাকারী। অর্থাৎ প্রতিটি এলাকার জন্য একজনেরও কম গণনাকারী গণনাকাজ সম্পন্ন করে।

এছাড়া ২২ হাজার ৩৭৩ জন সুপারভাইজার, ২১৯ জন সহকারী জেলা সমন্বয়কারী, ৭৮ জন জেলা সমন্বয়কারী এবং ১০ জন বিভাগীয় সমন্বয়কারী কাজ করেন এই প্রকল্পের আওতায়।

স্বাধীনতার আগে তথা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬০ সালে প্রথম নমুনা আকারে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম কৃষি শুমারি হয়। এরপর ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সালের কৃষি শুমারিতে দুই ভাগে পৌর এলাকাসহ সব কৃষি খানা গণনার আওতায় আনা হয়।

১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারিতে সব শহর ও পল্লী এলাকার কৃষি খানাকে পৃথক প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও শুধু পল্লী এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সব শহর ও পল্লী এলাকার সব কৃষি খানাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

Share this post

scroll to top