জুলাইয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে চায় শ্রীলঙ্কা। এজন্য সবধরণের প্রস্তুতি শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। কিন্তু আসন্ন তিন টেস্টের সিরিজ নিয়ে কোনো আশাই দেখছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দুই বোর্ডের মধ্যে কথা চালাচালি হচ্ছে ঠিকই। তবে কোনো অগ্রগতি নেই। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন। এছাড়া বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস ও আকরাম খানও বলছেন, ‘জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরের কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
করোনায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৮৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮২৩ জন। আর মারা গেছেন ১০ জন। কারফিউ জারি করে দেশটি মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দেশটির সরকার বলছে জুনের মধ্যেই করোনা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এজন্য জুলাই থেকে মাঠে ফিরতে আশাবাদী শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। প্রাথমিক অবস্থায় ১৩ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে ১২ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। ধীরে ধীরে ট্রেনিংয়ে ফেরানো হবে সবাইকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে নির্ধারিত সিরিজ আয়োজনের সব রকম প্রস্তুতি তাদের আছে বলে জানিয়েছে লঙ্কান বোর্ড। তবে বাংলাদেশ থেকে এখনও ইতিবাচক কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের অনুশীলনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। এটা নিয়মিত অনুশীলন হতে পারে আবার দীর্ঘদিন পর খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরেছে সেরকম কিছুও হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের শ্রীলঙ্কা সফরের আশা খুবই কম।’
‘সবার উপরে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সাড়া আমরা দিতে পারছি না। কারণ আমাদের দেশেই সেই পরিস্থিতি নেই যে খেলোয়াড়দের নিশ্চিন্তে ট্রেনিংয়ে ফেরাতে পারব। সবকিছুই এখন প্রক্রিয়াধীন। বিসিবি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে। বোর্ড সভাপতি মহোদয়ও বলেছেন, এখন ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। সব মিলিয়ে আশা নেই। করোনা নিয়ন্ত্রণে যে স্বাস্থ্য নিয়মাবলী আছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে।’
আকরাম খান বলেছেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে সফর করা কঠিন। এটা আসলে বোর্ডের সিদ্ধান্ত। বিসিবি সভাপতি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করবেন নিশ্চয়ই। তবে আপাতদৃষ্টিতে দেখছি কোনো সম্ভাবনা নেই। আন্তর্জাতিক কেন আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর চিন্তা করছি কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আমাদের আটকে দিচ্ছে। এখনো আমাদের ১০- ১৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ট্রেনিংয়ের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। সেই বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে আকরাম খান। তিনিও মনে করেন, ট্রেনিংয়ের জন্য এখন পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। ‘ছেলেরা প্রায় তিন মাস ঘরে। তিনটা টেস্ট খেলার জন্য যে স্ট্রেংথ দরকার তার কোনোটাই এখন নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। ঠিক ওদের প্রস্তুত হতেও সময় লাগবে। কোচদের দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এরপর মাঠে ফেরার চিন্তা। কাজগুলো সঠিকমতো সম্পাদন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। যেগুলো এখন করার সুযোগ নেই।এজন্যই বলছি সফরের সম্ভাবনা এখন কম।’- বলেন আকরাম খান।
বোর্ডের পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এর সাথে তো আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা ছেলেদের এখনও ঘরের থেকে বের করিনি। পরিস্থিতি ভালো হলেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যেভাবে করোনা পরিস্থিতি বাড়ছে তাতে সফরের সম্ভাবনা দেখছি না। এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে সিরিজ খেলতে যাওয়া কঠিন।’
জালাল ইউনুস আরেকটি বিষয়ও সামনে নিয়ে আসলেন, ‘এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি হয়তো ঠিক আছে। সামনে পরিস্থিতি ঠিক থাকবে কি না নিশ্চিত হয়। কারণ পার্শ্ববর্তী সবগুলো দেশেই করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে। সব মিলিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দিক বিবেচনা করতে হবে। আমাদের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, এ মুহূর্তে খেলোয়াড় পাঠানো ঠিক হবে না।’
করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফর স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশে সফর স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। এবার তাহলে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরও স্থগিত হওয়ার পথে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার তিন টেস্টই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।