ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২৫৮ জন গর্ভবতী মহিলার অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৮ মে থেকে ২০২০ সালের ২৮ মে পর্যন্ত হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অস্ত্রোপচার ছাড়া স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই নিরাপদ। তাছাড়া স্বাভাবিক প্রসবের সব লক্ষণ থাকার পরও অস্ত্রোপচারে একজন গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসবকালে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। জনসচেনতা বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণা, সভা সমাবেশ ও বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে উপজেলা হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধ করতে দালালদের উপর নজরদারী রাখতে হবে। উপজেলা হাসপাতালে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা চলে এ হাসপাতালে। ফুলপুর-তারাকান্দাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন অনেকে। প্রতিদিন গর্ভবতী নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমায় এ হাসাপাতালে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গর্ভবতী নারীদের জন্য স্বাভাবিক প্রসবে উদ্বুদ্ধকরণ ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বিষয়ে ধারণা দিতে ফুলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এটি একটি সুন্দর পদক্ষেপ। দেশের উপজেলার হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক প্রসব করানোর সুবিধা বাড়লে দরিদ্র প্রান্তিক মানুষেরা বেশি সুবিধার আওতায় আসবেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অথচ আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয় সি সেকশন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সভা, সমাবেশ, সেমিনার হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় এ ধরনের সেমিনার করতে হবে। ধারনা দিতে হবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) নীতি অনুসারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সিজারের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফুলপুর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শ্যামল আদিত্য জানান, বর্তমানে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী মহিলারা অস্ত্রপ্রচার ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করার জন্য আসছেন। মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এটাই আমাদের সফলতা।
ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল জানান, হাসপাতালে উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য তিনি সবসময় নজর রাখছেন। ফুলপুর হাসপাতালে সার্বক্ষণিক নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব সেবাকে আরো জোরদার করার বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন চিকিৎসকদের।
ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত জানান, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসকরণ এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত সিজারে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে না। সিজার ও মাতৃমৃত্যুকে আলাদাভাবে দেখা যাবে না। মাতৃমৃত্যুর সঙ্গে সিজারের সম্পর্ক আছে। উপজেলা হাসপাতালে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি উন্নত সেবা দিতে।
তার মতে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধের জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক তাদের প্রচারণা এ ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করবে।