ময়মনসিংহে বাকপ্রতিবন্ধী নারী হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৫

ভালুকা প্রতিবন্ধী নারীকে হত্যাকারীময়মনসিংহের ভালুকায় কারখানার নারী শ্রমিক বাকপ্রতিবন্ধি লিপি আক্তার সুমি (১৮) হত্যাকাণ্ডের দুই মাসেই হত্যারহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। ইতোমধ্যে সুমি হত্যায় জড়িতদের মাঝে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাটনো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মাঝে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, ভালুকা উপজেলার কংশেরকুল গ্রামে নূর হোসেনের বাকপ্রতিবন্ধি মেয়ে লিপি আক্তার সুমি। উপজেলার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়ায় বসবাস করে পাশের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসাবে চাকরি করতেন সুমি।

এ অবস্থায় গত ১৫ মার্চ রাত মিল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি তিনি। পরে, বিভিন্ন স্থানে মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করে গত ১৭ মার্চ শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নূর হেসেন।

এদিকে, গত ১৯ মার্চ রাতে উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিলাইজুরি খালের ব্রিজের পাশে খালের পানিতে ভাসমান আবর্জনার ডিভি থেকে অর্ধগলিত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে আনে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।

খবর পেয়ে নূর হোসেন থানায় এসে অর্ধগলিত ওই লাশটি তার মেয়ে লিপি আক্তার সুমির বলে শনাক্ত করেন এবং ওই ঘটনায় নূর তিনি বাদি হয়ে ২০ মার্চ ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তবে, ওই মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। মামলার পরপরই ঘটনার তদন্তে নামে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে উপজেলার হবিবাড়ির হামিদেরমোড় এলাকার আতর আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম রাকিব (১৯) ও জেলার ধোবাউড়া উপজেলার উদয়পুর হরিণধারা গ্রামের শামছুল হকের ছেলে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার ভাড়াটিয়া হৃদয় মিয়াকে (১৮) আটক করে থানা পুলিশ।

পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা সুমি হত্যায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরেও তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে থানা পুলিশ ধোবাউড়া উপজেলার হরিণধারা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মামুন (১৯), আবদুস ছাত্তারের ছেলে জয়নাল (১৯) ভালুকার খন্দকারপাড়ার মুঞ্জুরুল হকের ছেলে রাব্বিকে (২২) গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।

আসামিদের বরাদ দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার এস আই ইকবাল হোসেন জানান, আসামি হৃদয়, মামুন, জয়নাল উপজেলার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়ায় থেকে সুমির সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করত। রাব্বি লেগুনাচালক ও রাকিব অন্য একটি কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করে।

রাকিব সুমির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কিন্ত সুমি রাজি না হওয়ায় ১৪ মার্চ আসামিরা সুমিকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতে ঘটনার রাতে তারা সুমিকে লেগুনায় তুলে উপজেলার কড়ইতরী মোড় এলাকার একটি বাগানের ভিতর নিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সুমি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে গলায় উড়না পেঁচিয়ে হত্যার পর লাশ লেগুনায় তুলে জামিরদিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিলাইজুরি খালের ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়।

ইকবাল হোসেন আরো জানান, মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা শুরু করেন এবং প্রায় দুই মাসে রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার জড়িত ৬ আসামির মাঝে ৫ জনকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হন। এখন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনের মাঝে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পলাতক একজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সঠিকভাবে মামলার তদন্ত ও সফল অভিযান পরিচালনা করায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল হোসেনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

Share this post

scroll to top