‘ছ্যাপ দিয়ে ল্যাপ দিবেন আর সেই ব্রিজের উপর দিয়ে আমি যাব। এটা চিন্তা করা ঠিক না। রাতের বেলায় বৈঠক করে ক্যাশ বাটোয়ারা করলে কোন অন্যায়, কোন পাপ জায়েজ হয়ে যায় না- এটা মনে রাখবেন।’ সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর উপর ভেঙ্গে যাওয়া সেতু তড়িঘড়ি করে চালু করায় এর সাথে জড়িতদের উদ্দেশ্যে ওইসব কথা বলেন।
তিনি মঙ্গলবার সকালে নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে কর্মহীন মানুষদের আর্থিক সাহায্য করতে স্থানীয় ইসলামিক মিশন এলাকায় যান।
সেখান থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে নাকুগাঁও এলাকার ভোগাই সেতু। সেই সেতুর উপর দিয়ে তার রামচন্দ্রকুড়ায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিম্নমানের কাজ করে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সেই সেতু জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন।
এর প্রতিবাদে তিনি মাত্র ৫ মিনিটের সহজ রাস্তায় না যেয়ে প্রায় ২৩ কিলোমিটার ঘুরে রামচন্দ্রকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যান এবং জনগণের উপস্থিতিতে ওইসব কথা বলেন। ওইসময় শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানসহ স্থানীয় দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর উপর প্রায় ১০ বছর আগে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ভোগাই সেতু। সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই কাজটি বাস্তবায়ন করে। ১২৮টি পাইল ও ৬টি ব্যাচে ১৮৬.৪০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতু নির্মাণে ৩ দফায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে প্রায় ১২ কোটি টাকা করা হয়। সর্বাধিক ১০ টন মালামাল বহন করার ক্ষমতা রয়েছে ওই সেতুটির। ২০০৯ সালে জনসাধারণ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এটি। এরপর ওই সেতুর উপর দিয়ে সীমান্ত সড়ক চালু হয়।
নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এবং হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কয়লা-পাথর বোঝাই ভারি যানবাহন চলাচল করত এ সেতু দিয়ে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে ভোগাই নদী থেকে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে একদল বালুখেকো ২০-৩০ টন ওজনের ভেজা বালুর ট্রাক ভোগাই সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যেতো।
ঘটনাটি জানার পর সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় স্থানীয় এমপি মতিয়া চৌধুরী প্রশাসনকে ওই বিষয়ে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেন। কিন্তু বিষয়টি গায়ে লাগায়নি তারা। অতিরিক্ত লোডের ফলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোগাই সেতুর একাংশ ধ্বসে পড়ে। পাশাপাশি সেতুর নিচের পাইল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় সেতুর উপর দিয়ে সব রকমের যাতায়াত।
এদিকে ওই ঘটনার পর নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া, পোড়াগাঁও, নয়াবিলসহ ১০ ইউপি চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরে কাছে লিখিত অভিযোগ করে বালু উত্তোলন বন্ধ ও সেতু ধসের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। কিন্ত তড়িঘড়ি করে স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছোটখাটো মেরামত করে ব্রিজটি চালু করে দেয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত লোডে সেতুর একাংশ ড্যামেজ হয়। সেতুর নিচে আলাদা প্লেট লাগিয়ে ঢালাই করা হয়েছে। এটি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।