ফুরিয়ে যাচ্ছে পাপমোচনের সময়

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) মিম্বারে উঠলেন এবং বললেন—আমিন, আমিন, আমিন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মিম্বারে উঠছিলেন এবং বলছিলেন, আমিন, আমিন, আমিন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই জিবরাইল আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, যে রমজান পেলো অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না, সে জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন; যে তার মা-বাবা উভয়কে পেলো অথবা তাদের একজনকে পেলো অথচ তাদের মাধ্যমে সে পুণ্যের অধিকারী হতে পারলো না এবং সে মারা গেলো, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন; যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করলো না এবং মারা গেলো, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন—বলুন আমিন। আমি বললাম আমিন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৮৮)

আলোচ্য হাদিসে রমজান মাসে গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার প্রতি বিশেষ তাগিদ রয়েছে। কেননা রমজান রহমত ও মাগফিরাতের মতো পাপ থেকে মুক্তিলাভেরও মাস। একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে পাপ পরিহার ও তওবার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

রমজান পাপ পরিহার করার মাস

আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

আর আল্লাহভীতির মূলকথা হলো গুনাহ ও পাপ থেকে বেঁচে থাকা। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)

অপর হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ৫৬৩৬)

রমজান পাপমোচনের মৌসুম

পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন এবং পাপ মার্জনা করেন। যেমন ইফতারের আগমুহূর্ত। এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)

এছাড়া স্বয়ং রোজাও পাপ মার্জনার মাধ্যম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করবে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

যদি রমজানে পাপ পরিহার এবং অতীত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা হয়, তবে রোজা মুমিনের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ তা ত্রুটিমুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৩৩)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, রোজাকে ঢালস্বরূপ বলার কারণ হলো তা মানুষকে পৃথিবীতে পাপাচার থেকে রক্ষা করে এবং পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে। (আরবাউনান-নাবাবিয়্যা বি-তালিকি ইবনে উসাইমিন, পূব্জা ৫৫)

রমজানে গুনাহ মাফ না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক

রমজান পেয়েও গুনাহ মাফ করাতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক। যেমনটি আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেলো এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

তাই আসুন! রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে নিজের গুনাহ মাফের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমিন।

লেখক: সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Share this post

scroll to top