মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে এখন অচলাবস্থা বিদ্যমান। ঘুড়ছে না গণপরিবহনের চাকা। কিন্তু এর মধ্যেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ঢাকায় গিয়ে চেক সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা পড়েছেন বিপাকে।
গত ৫ মে যুগ্ম সচিব মো. রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি, ভৌত ও জীববিজ্ঞান তিনটি গ্রুপের ১২০০ জনকে ৭-১১ মার্চের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে এসে চেক সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। এর ফলে করোনা দূর্যোগের সময় চেক গ্রহণ নিয়ে ফেলোশিপ প্রাপ্তরা পড়েছেন বিপাকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অভিযোগ করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঢাকায় গিয়ে চেক সংগ্রহ করা খুব কঠিন। যারা ঢাকায় আছেন তাদের জন্যও এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে,বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে একজনের পক্ষে অন্য কেউ চেক সংগ্রহ করতে পারবেন বলে নতুন করে নির্দেশনা প্রদান করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, যে চেকগুলো প্রদান করা হবে তার মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। এত কম সময়ের মধ্যে পরিচিতদের মাধ্যমে চেক সংগ্রহ করে অর্থ নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে আসতে হয়তো চেকের মেয়াদই শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঢাকায় অনেকেরই পরিচিত কেউ নেই। সেক্ষেত্রে অনেকের পক্ষেই চেক সংগ্রহ করাও সম্ভব হবে না।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আবেদনের সময় সকলেরই অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট নেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই ফেলোশিপের অর্থ ট্রান্সফার করা সম্ভব। অথচ দেশের এই পরিস্থিতিতে চেক দিয়ে অর্থ প্রদানের চেয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করলে সকলেই উপকৃত হতো।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে ফেলোশিপ প্রাপ্তদের চেক মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে প্রদানের ব্যবস্থা করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) বলে জানা গেছে। আর এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাকৃবির শিক্ষার্থী ও গবেষকরা।
এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, এনএসটির চেকটি ব্যাক্তিগত চেক হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে এই চেক সরাসরি শিক্ষার্থীদেরই নিতে হবে। আর যারা এখন ঢাকা যেতে পারছে না তারাও তাদের পরিচিতদের মাধ্যমে নিতে পারবে। তাছাড়া বিষয়টার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিস্টেমই জড়িত নয়। এই চেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রদান করতে গেলে নানা ধরনের ঝামেলা হতে পারে। তাই ব্যক্তিগতভাবেই চেক সংগ্রহ করে নিতে হবে।
উল্লেখ্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) কর্মসূচির আওতায় খাদ্য ও কৃষি বিজ্ঞান গ্রুপের মোট ১৭৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী/গবেষক (এমএসসি; এমফিল ও পিএইচডি), জীব ও চিকিৎসা বিজ্ঞান গ্রুপের ৫৯২ জন, ভৌত বিজ্ঞান থেকে ৭৭৮ এবং নবায়ন গ্রুপে ৪৮ জনকে অনুদান প্রদান করা হয়।