পেকুয়ার সেই ইউএনওর বদলির আদেশ স্থগিত

saika shahadatসরকারি চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে বদলির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতের বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিতপত্রে শুক্রবার (১ মে) সংস্থাপন শাখার ২৬৯ নম্বর স্মারকে জারিকৃত এক আদেশে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। একই আদেশে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে পেকুয়ার নতুন ইউএনও হিসাবে দেওয়া নিয়োগ আদেশও স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা কর্তৃক স্বাক্ষরিত ১৬৭ নম্বর স্মারকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে কক্সবাজারে পেকুয়ার নতুন ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আগামী ৩ মের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছিল। এরআগে, বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয় এবং বিদায়ী ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের চাকরি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এদিকে চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার পর থেকে চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৭ এপ্রিল পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষরে তোলা ৩০০ বস্তা চাল (১৫ টন) বারবাকিয়া হোসনে আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধারের পরপরই এ নিয়ে সৃষ্টি হয় ধুম্রজাল।

উক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেশি জানান, উক্ত চাল ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। তবে ওই সময়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলছিলেন, ইউএনও তার কাছ থেকে একটি স্বাক্ষর নিয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।

পরে ঘটনা তদন্ত করে উক্ত ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ওইদিন দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল রাতে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলাও দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর- ৪/২০ইং। মামলার পর থেকে চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) আমিনুল ইসলাম জানান, হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য ১৫ টন চাল প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসাবে টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। গত ৬ এপ্রিল চালগুলো উত্তোলন করা হলেও তিনি মাস্টাররোলসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেননি। চালগুলো কোথায় আছে সে বিষয়েও কোনও সুরহা দেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একইভাবে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে পেকুয়ার ইউএনওকেও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই মানবিক সহায়তা হিসেবে ৪০ মেট্রিক টন চাল পেকুয়া উপজেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ২৫ টন চাল বিলি করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালক ও অসহায় দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য গত ৩১ মার্চ টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর অনুকূলে ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ওসি মো. কামরুল আজম জানান, ‘মামলার পর থেকে চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

এদিকে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি ত্রাণের চাল আত্মসাতের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় চরমভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই বাস্তবতায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে টইটং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা তার বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Share this post

scroll to top