কৃষক মো. আবদুল সোবাহান (৬৫) ২০০৪ সালে ১২ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়েছিলেন। স্ত্রী রাহেলা খাতুনকে নিয়ে ব্যাংকে যান ঋণ পরিশোধ করার জন্য। গিয়ে যা জানতে পারেন, তাতে দুজনই হতবাক। আবদুল সোবাহানকে মৃত দেখিয়ে আজিজুল নামের এক ব্যক্তি তাঁর ছেলে পরিচয় দিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করে নতুন করে আরও ৩০ হাজার টাকা ঋণ তুলে নিয়ে গেছেন। এমন ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল সদর কৃষি ব্যাংক শাখায়।
রাহেলা খাতুন বলেন, ১১ মার্চ স্বামীকে নিয়ে ওই ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করতে যান তিনি। ব্যাংকটির ঋণ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ নথি দেখে তাঁকে ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলেন। রাহেলা তখন ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আমার স্বামী ২০০৪ সালে ১২ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়েছে। সুদে-আসলে তা ২৪ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমি কেন এত টাকা দিতে যাব।’ রাহেলা তখন ঋণের নথিতে তাঁর স্বামীর ছবির ওপর আজিজুল নামে এক ব্যক্তির ছবি সুতা দিয়ে বাঁধা দেখতে পান। রাহেলা ছবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আজিজুল নামের ওই ব্যক্তি পুত্র পরিচয় দিয়ে এবং তাঁর স্বামীকে (সোবহানকে) মৃত দেখিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করেন। সোবহানের নথির কাগজপত্র ব্যবহার করেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আজিজুলকে নতুন করে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেয়।’ আজিজুলের ছবি শনাক্ত করেছেন এম এ হাই নামে ব্যাংকের তৎকালীন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন।
রাহেলা খাতুন বলেন, তাঁর চার ছেলে মো. হাবিবুল্লাহ, অলিউল্লাহ, রহমত উল্লাহ ও জহিরুল্লাহ। আজিজুল নামে তাঁর কোনো ছেলে বা কোনো স্বজনও নেই। ব্যাংক কোনো যাচাই ছাড়া কীভাবে আজিজুলকে তাঁদের ছেলে বলে মেনে নিল।
বাহের বানাইল গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর বাবাকে মৃত দেখিয়ে একই গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে (নাম বলতে পারেননি) ৫০ হাজার টাকা ঋণ তুলে নিয়েছিল। ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। পরে গ্রামে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে ওই ব্যক্তি ৩৮ হাজার ও তাঁর বাবা ১২ হাজার টাকা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করেন। গ্রামের লোকজন বিশ্বাস করেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া এভাবে ঋণ উত্তোলন সম্ভব নয়।