বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত অন্তত ১২৫টি দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বিশ্ব মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি। সাধারণ মানুষ করোনা সম্পর্কে খুব কমই জানেন। এ ভাইরাস সম্পর্কে মানুষের মনে উদ্ভূত গুরুত্বপূর্ণ ১১টি প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই:
১. করোনা কিভাবে ছড়ায়?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৫ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ করতে শুরু করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অনেক পরেও এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এ ভাইরাস ব্যক্তির শরীরে ১৪ দিন পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। তবে কিছু গবেষক দাবি করছেন, এটা ২৪ দিন পরেও লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। করোনার জীবাণু শরীরের সুপ্ত থাকার সময়টা জানা অত্যন্ত জরুরি। এটি জানলে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসকরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।
২. করোনা থেকে সুস্থ হলেই কী সে নিরাপদ?
করানা থেকে সুস্থ হয়ে পুনরা্য় করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কারণ তাদের শরীরে করোনা প্রতেরোধী শক্তি তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় হাসপাতাল থেকে কয়েক জন রোগীকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তারা আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের ছেড়ে দেয়ার আগে হাসপাতালে করা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তবে আশার কথা হলো ওই সমস্ত রোগী এখন সুস্থ আছেন।
৩. করোনাভাইরাস ও ফ্লু’র মধ্যে পার্থক্য কী?
করোনা ও ফ্লু একই ধরণের লক্ষণ প্রকাশ করায় দু’টির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন হয়ে গেছে। করোনার প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর এবং ঠাণ্ডা। ফ্লুতে আক্রান্ত হলে মানুষ গলায় ব্যথা অনুভব করে, যেখানে করোনায় আক্রান্ত হলে শ্বাঃসকষ্টে ভোগে। কারো যদি মনে হয়ং যে সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তা হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করবে হবে।
৪. আইসোলেশনের কী কোনো দরকার আছে?
আইসোলেশন বলতে ১৪ দিন ঘরে থাকা, কর্মস্থলে না যাওয়া, বিদ্যালয়ে অথবা জনসম্মুখে না বের হওয়া, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা। বাড়িতেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকা।
যদি ওষুধপত্র ও অন্যান্য দৈনন্দিন জিনিসের প্রয়োজন হয় তা হলে দরজার সামনে রেখে যেতে বলতে হবে। কোনা অবস্থাতেই কারো সাথে দেখা করা যাবে না। এমনকি নিজের পোষা প্রাণীটিকেও স্পর্শ করা যাবে না। যদি একান্তই করতে হয় তা হলে স্পর্শ করার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধূয়ে ফেলতে হবে।
৫. এ্যাজমা রোগীদের জন্য করোনভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?
এ্যাজমা রোগীদের জন্য করোনভাইরাস অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের এ্যাজমা বিষেশজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ্যাজমা রোগীদেরকে প্রতিদিন ইনহেলার গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়, যেটা এ্যাজমা আক্রমণের ঝুঁকি কমায় সেই সাথে করোনাভাইরাস সহ অন্যান্য ভাইরাস ঝুঁকি কমায়।
৬. যদি বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া হয় তা হলে পরিবারগুলোকে কী কোনো সহায়তা প্রদান করা হবে?
পরিবারে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জনর্যত নিয়োগকর্তারা আপনাকে সময় দেবে তবে সে সময়টাতে তারা আপনাকে কোনো বেতন দেবে না।
পরিবারের প্রয়োজনে যে সময়টা আপনাকে ততটুকুই নিতে হবে। অতিরিক্ত নেয়া যাবে না।
আর সরকার করোনাভাইরাসের কারণে আইনে শিথিলতা এনেছে।
৭. কোনো দরজার হাতলে করোনাভাইরাসের জীবানু লাগলে তা কতক্ষণ স্থায়ী হবে?
যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি দরজা কিংবা অন্য কোনো কিছুর ওপর স্পর্শ করে তা হলে সেখানে করোনাভাইরাসের জীবানু লেগে যাবে। এর মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে। দরজার হাতল এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ।
বিষেশজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনো কিছূর ওপরে করোনার জীবানু লেগে থাকলে তা এক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সুতরাং প্রতিনিয়ত হাত ধোয়ার বিকল্প নেই।
৮. পুকুরে সাতার কাটা কী নিরাপদ?
সুইমিং পুল কিংবা পুকুরে ক্লোরিন নামে এক ধরণের ক্যামিকেল থাকে যেটা ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং সুইমিং পুলে সাঁতার কাটায় কোনো ঝুঁকি নেই যদি ওই পানিতে ওই ক্যামিক্যালটির অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে।
৯. করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে কী মাস্ক পরা উচিত?
দেখা যায় চিকিৎসকরা বিভিন্ন জীবানুর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি এতে জীবানুর সংক্রমণ থেকে বিশেষ কোনো সুরক্ষা পাওয়া যায় না। বরং তারা বার বার হাত ধোয়াকেই পরামর্শ দিয়েছেন।
১০. শিশুরা কতোটা ঝুঁকিতে আছে?
চায়না থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায় তুলনামূলকভাবে করোনাভাইরাসে শিশুরা কম আক্রান্ত হয়েছে।
এর কারণ হলো সম্ভবত শিশুরা এ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পরছে। অথবা এখনো কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। অথবা শিূদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
যাইহোক যে সমস্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে যেমন এ্যাজমা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যে কোনা সময় করোনায় আ্রকান্ত হতে পারে তারা।
১১. করোনায় আক্রান্ত কেউ খাবার তৈরি করলে সেটা খাওয়া যাবে কী?
করোনায় আক্রান্ত কেউ খাবার তৈরি করলে খাবারের মধ্যৈ করোনার জীবানূ মিশে যাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। কারণ রান্না করার সময় তার মাধ্যমে খাবারের মধ্যে করোনার জীবানু ছড়িয়ে যেতে পারে।
করোনাভাইরাস যেহেতু সর্দির মাধ্যমে ছড়ায় তাই বারবার ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিষেশজ্ঞরা।
সূত্র : বিবিসি