বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, টিভি খুললেই দেখছি অনেক চ্যানেলে ‘থ্যাঙ্ক ইউ পিএম’ এর বিজ্ঞাপন চলতে থাকে। কিছু বিজ্ঞাপনের পর বোঝাও যায় না, বিজ্ঞাপন দাতা কে? কিছু বিজ্ঞাপনের পর বোঝা যায় যে, বিজ্ঞাপনদাতা মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না? নির্বাচন সামনে রেখে এখন কেন সরকারি অর্থে এধরণের প্রচার চালু রাখা হচ্ছে? এ বিজ্ঞাপন তো দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় প্রচারিত হচ্ছে। আর বিজ্ঞাপন প্রচার করে আওয়ামী লীগ ভোটের সুবিধা নেবেন। এটা নির্বাচন আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
রিজভী বলেন, এ বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সরকারি টাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এটার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণায় সমান সুযোগের বিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এসব দেখে না দেখার ভান করছে। অবিলম্বে সরকারি টাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে বিজ্ঞাপণ প্রচার বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। গণমাধ্যমে সকল দলের সমান সুযোগের ব্যবস্থা নিতে আহবান জানাচ্ছি।
তিনি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ইসি। এজন্য ভোট কেন্দ্র থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রিটার্নিং অফিসারদের এ নির্দেশনা দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। নির্দেশনাগুলো হলো- প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কোনো ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না। এক সঙ্গে পাঁচজনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না। ১০ মিনিটের বেশি কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবে না। ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারবে না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ধরনের কর্মকা- হতে বিরত থাকতে হবে। সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। সাংবাদিককে পরিচয়পত্রের উল্টো পিঠের সকল নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
এ ধরনের নির্দেশনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি বর্তমান ইলেকশন কমিশন সরকারের খয়ের খাঁ। সরকারের হুকুমে নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এমনিতে একের পর পর এক কালাকানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। গণমাধ্যমের উপর চলছে সরকারি নিবর্তনমূলক খড়গ। এছাড়া বিভিন্ন গোয়ন্দো সংস্থা প্রতিনিয়ত মিডিয়াকে ওয়াচ এর নামে ধমকিয়ে যাচ্ছে। ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপির খবর যাতে প্রকাশ না হতে পারে, ভোট সন্ত্রাসের খবর যাতে প্রকাশ না হতে পারে সেজন্যই গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ কঠোর নীতিমালা।’
তফসিল ঘোষণার পরও দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মামলা, গ্রেফতার ও বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও হুমকি ধামকি অব্যাহত আছে। গতকালও একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা দরকার। কমিশনারের কথায় পরিস্কার হলো যে, কমিশনের কথা মানছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রাখা হয়েছে যারা গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও দলীয় ক্যাডারদের বেছে বেছে নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচনী প্রশাসন না সাজালে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে না। এখনো থামছে না মামলা, গ্রেফতার, জেলগেহট থেকে পুনরায় গ্রেফতার ও বাড়িতে বাড়িতে পুলিশী তল্লাশীর নামে হয়রানি।
রিজভী বলেন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর ছাত্রদলের গোলাম রাব্বানী রবিন, খুলনা মহানগরীর সোহেল হোসেন, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ পৌরসভা বিএনপি নেতা শমসের আলীর বাড়িতে তল্লাশীর নামে পুলিশ ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। আমি অবিলম্বে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।