সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি
কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে গণসংযোগের পাশাপাশি মনোনয়ন লাভের আশায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জোর লবিং শুরু করেছেন। পাশাপাশি পোস্টারিং, ব্যানার, মোবাইল মেসেজ ও ফেসবুকের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ও দোয়া কামনা করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম প্রকাশিত হলেও বর্তমানে তিনি ফুসফুসে ক্যানসারজনিত জঠিল রোগে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি নির্বাচন করতে না পারার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তার ছোট ভাই ব্রি. জেনারেল (অব:) সাফায়াতুল ইসলাম। তিনি গত ৪ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে জেল হত্যা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফের নির্বাচন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করে তার রোগ মুক্তিতে সবার দোয়া কামনা করেন। এর পর থেকে এ আসনে কে হবেন নৌকার কাণ্ডারি এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অন্য দিকে সৈয়দ আশরাফ নির্বাচনে না আসার খবরে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন বড় দুই দলের ১১ জন।
কিশোরগঞ্জ-১ আসনটির রয়েছে রাজনৈতিক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক পাটমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও ঐতিহাসিকভাবে ঈশা খাঁ-মানসিংহ, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ, আবদুর রহিম মুন্সী, নীলকুটি, জমিদার বাড়িসহ বহু রূপকথার স্মৃতিবিজড়িত ও লোকসাহিত্যের তীর্থস্থান এই হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ। এখানকার রাজনীতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিক সহ-অবস্থান পুরো বাংলাদেশকে করেছে মহিমান্বিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর এ আসনটি বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে বিএনপি এ আসনটিতে জয় লাভ করলেও পরে আবার আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি চায় হারানো আসন ফিরে পেতে, আর আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের অসুস্থতায় তার সমর্থকেরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হলেও এখন নতুন করে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে চিন্তা করছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামে ছোট ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল (অব:) সাফায়াতুল ইসলাম কিংবা রাষ্ট্রপতি মো: আবদুুল হামিদের মেঝ ছেলে মো: রাসেল আহম্মেদ তুহিনকে। ব্রি. জেনারেল (অব:) সাফায়াতুল ইসলাম এখনো নির্বাচনী মাঠে সরব না থাকলেও রাষ্ট্রপতির ছেলে রাসেল আহম্মেদ তুহিন দীর্ঘ দিন হোসেনপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কিশোরগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে মিছিল-মিটিং, গণসংযোগ ও উঠান-বৈঠক করে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে সচেষ্ট রয়েছেন। অন্য দিকে সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিতে বিএনপির হাইকমান্ডসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আসনটি পুনরুদ্ধারে মনোনয়ন দিতে স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে ধানের শীষের কাণ্ডারি হিসেবে ভাবছেন বেশ জোরেশোরে। তাই মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দুই দলেই এখন কৌশলী ভূমিকায়।
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন- সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই সাবেক সেনাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাফায়াতুল ইসলাম, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের মেঝ ছেলে মো: রাসেল আহম্মেদ তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক কৃষি ব্যাংকের পরিচালক কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন।
অন্য দিকে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ হেলালি, দেশনেত্রী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ছাত্র ফোরামের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মনিরুল হক রাজন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম চুন্নু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ রব্বানি, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাঈল।
এ ছাড়া অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মো: মোস্তাইন বিল্লাহ, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভুপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক এস কে শাহীন নবাব।
জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়ন পেলে এবারো তিনি বিজয়ী হতেন কিন্তু অন্য যে কেউ মনোনয়ন পেলে আসনটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অন্য দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: মাজাহারুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা অ্যাডভোকেট মনিরুল হক রাজনসহ অনেকেই বলেন, যদি এবার এ আসনে যোগ্যপ্রার্থী বিএনপি মনোনয়ন দিতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে ধানের শীর্ষের প্রার্থীর বিজয় কেউ রুখতে পারবে না।