একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য ভোট কেন্দ্র থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রির্টানিং অফিসারদের এ নির্দেশনা দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরে ব্যাপারে আমাদের একটা নীতিমালা আছে সেই নীতিমালা অনুসারে উনারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে পারবেন অল্প সময়ের জন্য। ছবিও নিতে পারবেন। তবে কেউ সরিসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোটাররা ভোট দিবে আর ক্যামেরা নিয়ে কোথায় ভোট দিচ্ছে এটা দেখবে এটা পৃথিবির কোথাও নেই। একটা সুনির্দিষ্ট এলাকা যার বাইরে গণমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশ করতে পারবেনা। ভোট কেন্দ্র থেকেই সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত যদি নির্বাচন কমিশন নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই বলার নেই।
এর আগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়। ওই দিন পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের হাতে ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক নাজেহাল হন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশেষ করে বেশি প্রতিবন্ধকতার শিকার হন ফটোসাংবাদিকরা। যদিও নির্বাচন কমিশন ও মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হলেই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয় ইসির পক্ষ থেকে। বিভিন্ন কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, ওপরের নির্দেশে সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তারা শুধুমাত্র ওপরের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন। এসব ঘটনাকে নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে।
তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে সাংবাদিকরা পুলিশি বাধার মুখে পড়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেই লিখিত নিষেধজ্ঞা জারি করে। এক নির্দেশনার মাধ্যমে মাগুরা-১ আসনের উপ-নির্বচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ ও কথা বলার উপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইসি।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আরাফাত আরা স্বাক্ষরিত চিঠিতে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে সাংবাদিকদের ৯টি নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়। এছাড়াও এ নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসারকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়।
রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৯টি শর্ত দিয়ে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কোনো ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না; এক সঙ্গে ৫ জনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না; ১০ মিনিটের বেশি কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবে না; ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারবে না; সাংবাদিকগণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না; কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে; প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকতে হবে; সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হবে এবং সাংবাদিককে পরিচয়পত্রের উল্টো পিঠের সকল নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
এ নির্দেশনা জারির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রিজাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
পরে গত বছরের এপ্রিলে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিক প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করে অফিস আদেশ ইস্যূ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ওই অফিস আদেশে সাংবাদিকরা নির্বাচন ভবনের কোন কোন দপ্তরে এবং কার কাছে যেতে পারবেন তার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সাংবাদিকদের ওই ভবনের নিচতলায় অবস্থিত প্রেস প্রিফিং রুম, দ্বিতীয় তলায় জনসংযোগ অধিশাখা এবং চতুর্থ তলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ইসি সচিবের রুম প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়।
ইসির সহকারী সচিব (সেবা-২) আরাফাত আরা স্বাক্ষরিত ওই চিঠি ইসির কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি জারির পর থেকে ইসি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তারা বলেন, নির্বাচন ভবনের প্রবেশ দরজা থেকে সব ফ্লোরের দরজায় ডিজিটাল লক লাগানো হয়েছে। এর ফলে যাদের কার্ড থাকবে তারা ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচন ভবনে প্রবেশ করতে পারবে না। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিব ছাড়া অন্য কোনো কমিশনার ও কর্মকর্তাদের মিডিয়ায় বক্তব্য না দিতে চিঠি জারি করা হয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত কমিশনকে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
ইসির কর্মকর্তারা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্দেশে কমিশনের বার্তা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের পদক্ষেপ ইসির উপর মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।