সাংবাদিক মাসদুা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় মানহানির মামলায় আদালতে হাজির করার সময় রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে গ্রেফতারকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যারিস্টার মইনুলকে উপর্যপুরি চড়-থাপ্পড়ের পাশাপাশি তার উপর জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করে। বেলা সাড়ে বারোটার সময় আদালত চত্বরে মইনুলের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক দখলে নিয়ে ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ করছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল ১১টা থেকে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
রোববার বেলা ১২ টা ৩৫ মিনিটে তাকে কড়া পুলিশী পাহাড়ায় নেয়া হলেও পুলিশের উপস্থিতিতেই তার ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২ টা ৩২ মিনিটে আদালত চত্বরে মেট্রোপলিটন পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় আদালতে নিয়ে আসেন। এরপর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশ পথে নিয়ে সাদা রংয়ের একটি গাড়ি থেকে নামানোর সময় ব্যারিস্টার মইনুলকে উদ্দেশ্য করে ইট, জুতা ও ডিম নিক্ষেপ শুরু করে সমেবত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
একপর্যায়ে পুলিশ ব্যারিস্টার মইনুলকে গাড়ি থেকে নামাতে থাকলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে থাপ্পড় মারে। এসময় নেতাকর্মীরা মইনুলকে উদ্দেশ্য করে ডিম, জুতা নিক্ষেপ শুরু করে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ব্যারিষ্টার মইনুলের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেয়। এসময় সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ করে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এতে মইনুলের আইনজীবীদের সাথে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় ।
পরে ব্যারিস্টার মইনুলকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে এখন তার জামিন শুনানী শেষে তাঁকে আবারো রংপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, রংপুর যুব মহিলালীগের কর্মী মিলি মায়া বেগমের দায়ের করা মানহানির মামলায় আজ রোববার রংপুর আদালতে হাজির করার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে।
এর আগে, আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলকে হাজির করার সংবাদে সকাল ৯ টা থেকে রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের গেটে অবস্থান নেয় আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বেলা ১১টায় রংপুর জেলা যুব মহিলালীগ সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ব্যারিষ্টার মইনুলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু মিছিল বের করে।
এসময় তারা মইনুলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরে সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরাও বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এদিকে হাজিরা দিতে আসা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কারমাইকেল কলেজের সাবেক জিএস শহিদুল ইসলাম মিজু আদালত প্রাঙ্গনে জানান, আমাদের হাজিরা আছে। কিন্তু আদালতের গেট দখলে নিয়ে যেভাবে ঝাড়ু মিছিল করা হচ্ছে। তাতে আমরা আদালতে প্রবেশ করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, এভাবে আদালত প্রাঙ্গনে ঝাড়ু মিছিল করাটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় আঘাত বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির টক-শোর একপর্যায়ে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন চরিত্রহীন বলে উল্লেখ করেন। এরপর গত ২২ অক্টোবর রংপুর আদালতে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন মিলিমায়া বেগম। ওইদিন সন্ধ্যায়ই ব্যরিস্টার মইনুলকে গ্রেফতার করা হয়।