ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর বিরুদ্ধে আনা চাঁদাবাজি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রায় ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়সহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে কমিশনে।
এদিকে, এমন অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন এনায়েত উল্যাহ। তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তার সম্মানহানি করতেই পরিকল্পনা মাফিক দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এর অংশ হিসেবে এনায়েত উল্যাহ, তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, মেয়ে চাশমে জাহান নিশি ও ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয়ের নামে নিবন্ধিত যানবাহনের তথ্যও চাওয়া হয়েছে ফেনী বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে।
সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে এ লক্ষ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও জানায় সূত্র।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, এনায়েত উল্যাহর দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলেও তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে।
অভিযোগে এনায়েত উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের তালিকায় বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ও কানাডায় এই পরিবারের রয়েছে সেকেন্ড হোম। এছাড়া সারাদেশে এনা পরিবহনের প্রায় ৮০০ গাড়ি রয়েছে তার। এর প্রতিটির মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা। এছাড়া, পূর্বাচল সংলগ্ন ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে প্রায় শত বিঘা জমি, ময়মনসিংহে শত বিঘা জমি, ভালুকায় ২৩ বিঘা জমিতে ফুড ফ্যাক্টরি এবং সিলেটে রয়েছে এনা পরিবহনের নিজস্ব টার্মিনাল। মিরপুরে বহুতল সাতটি বাড়ি,কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেলও রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ আসার পর সেটি অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছে। সেজন্য একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা চাইলে যে কারও তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে। এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আপত্তিও নেই। তবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আর সম্মানহানি করতেই পরিকল্পনা মাফিক দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
দুদকের তদন্তের মধ্য দিয়ে অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হবে বলেও দাবি করেন এই বাসমালিক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসবে কোনটি সত্য, আর কোনটি মিথ্যা।
ঢাকা শহরে ১৫ হাজার গাড়ি চাঁদা তোলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে আদতে গাড়ি রয়েছে ৫ হাজার। তবে চাঁদা তোলার অভিযোগ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
অভিযোগে তার মালিকানায় ৮০০টি বাসের তথ্যও অস্বীকার করেন এনায়েত উল্যাহ। তিনি জানান, তারা মালিকানায় ৮০০ নয়, গাড়ি রয়েছে ৩০০টি। প্রতিটি গাড়ির ট্যাক্স সরকারকে দেওয়া হয় বলেও দাবি তার।
কোনো অবৈধ সম্পদ নেই দাবি করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমার যে সম্পদ রয়েছে, তা শতভাগ বৈধ উপায়ে করা হয়েছে।
নিজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দেন তিনি। উল্টো চাঁদাবাজদের তিনি সংগঠন থেকে বের করে দিয়েছেন দাবি করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, গত কয়েক বছর আগে যারা চাঁদাবাজি করেছে, তাদের সংগঠন থেকে বের করে দেওয়ার কারণেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
‘আমাদের সঙ্গে পরিবহন খাতের মালিকপক্ষ রয়েছে। চাঁদাবাজরা পরিবহন খাতকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা চায় পরিবহন খাতকে ধ্বংস করতে। কিন্তু আমার শক্ত অবস্থানের কারণে তারা পারেনি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ অবস্থান নিয়ে আমার সম্মান নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে,’— বলেন এনায়েত উল্যাহ।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘অনুসন্ধানের পরই বলা যাবে তিনি দোষী নাকি নির্দোষ।’