বিশ্বের ১৯৩ টি রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘূণিত রাষ্ট্র হলো ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তির মূলে রয়েছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলেন কূটচাল। এটি জবরদখলকারী এক রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং জীবাণুযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার দেশটিকে বেয়ারা ও ঘৃণিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে। ইসরাইলের এমন কিছু দুর্বলতা রয়েছে যা রাষ্ট্রটির জন্য বয়ে এনেছে অমর্যাদা এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য অসম্মান।
১. দখলদার হিসেবে পরিচিতি
ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে গঠিত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রদান করে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়। ১৯৪৯ সালে ইসরাইল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী আয়তন ২০ হাজার ৭৭০ বর্গকিলোমিটার হলেও ইসরাইলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ নম্বর প্রস্তাবে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও বাইতুল মোকাদ্দাস তথা জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হলেও ইসরাইল জবরদখল করে রেখেছে। এসব প্রস্তাব অনুযায়ী, তেল আবিবকে বিনা শর্তে এই দুই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। তার পরও তেল আবিব জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন করে দুই হাজার ৫০০ ইহুদি বসতি নির্মাণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ আলাদা আলাদা বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরাইলের নয়া বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে।
২. বিশ্ববাসীর সমর্থন লাভে ব্যর্থতা
ইসরাইল ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জেরুসালেমের পশ্চিম অর্ধেক দখল করে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল বাকি অর্ধেকাংশ তথা পূর্ব জেরুসালেম দখল করে। ১৯৮০ সালে ইসরাইল জেরুসালেম আইন পাস করে। ইসরাইলের জেরুসালেম দখলকে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকার করে না। দু-একটি দেশ ছাড়া কোনো দেশই জেরুসালেমের কোনো অংশকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকার করে না। পৃথিবীর অনেক দেশের সাথেই ইসরাইলের দূতাবাস বা কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
৩. বর্বর আচরণে অভ্যস্ততা
ফিলিস্তিনিদের প্রতি বর্বর আচরণের জন্য ইসরাইল কুখ্যাত। দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে। এমনকি ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেমিদের বিদেশী অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে, যেখানে তাদের জন্ম সেখানে তাদের কোনো জন্মগত অধিকার নেই।
৪. প্রতিবেশীদের সাথে বৈরিতা
মধ্যপ্রাচ্যের জ্বলন্ত সমস্যা ইসরাইল আমেরিকার মদদেই শক্তিশালী। প্রতিবেশীদের সাথে চরম বৈরিতায় নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস দীর্ঘ দিন ধরে দখল করে রেখেছে, মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি, বিশ্বসম্প্রদায়ের আহ্বান, কোনো কিছুই আমলে নেয় না ইসরাইল।
৫. ইসরাইলের নারী সেনারাও পতিতাবৃত্তি করে
ইসরাইলে নারী ও পুরুষ সেনাসদস্য অর্থের অভাবে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করে মিশেল রোজিন নামে ইসরাইলের এক নারী সংসদ সদস্য। এলেম-ইয়ুুথ ইন ডিসট্রেস ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের শতকরা ৩০ শতাংশ তরুণ-তরুণী মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত এবং যাদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নারী গোয়েন্দারা, ইসরাইলের রাজনৈতিক নারী নেত্রীরাও বিভিন্ন সময়ে
আরব নেতৃবৃন্দের সাথে বন্ধুত্ব ও শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গতা স্থাপন করে তাদের নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে ও ইসরাইলের বিরোধিতার পথ থেকে বিরত রাখতে সফল হয়েছে। ইসরাইলের নৈতিকতাবিরোধী এ কৌশল নিন্দিত হয়েছে।
৬. গোঁড়ামি ও চরম জাতীয়তাবাদী
পৃথিবীতে ইসরাইল হলো একমাত্র দেশ যার নাগরিকত্ব পেতে পারে ইহুদিরাই। বিশ্বের যেকোনো ইহুদির ইসরাইলে বসবাসের অধিকার আছে এবং ইসরাইলের ল অব রিটার্ন অনুসারে তারা ইসরাইলি নাগরিকত্ব পাবে; তাই ইসরাইলকে বলা হয় প্রমিজ ল্যান্ড। ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইহুদি। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল ১৪ হাজার ফিলিস্তিনির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে।
৭. দাবির সাথে বাস্তবতার অমিল
ইসরাইল জেরুসালেমকে তার অবিভক্ত রাজধানী বলে দাবি করে কিন্তু সেখানে যারা বাস করেন তাদের সাথে এ দাবির কোনো মিল নেই। ফিলিস্তিনিরা বর্ণবাদসদৃশ পরিস্থিতিতে বাস করে, সেখানে ইসরাইলিরা স্বাভাবিক জীবন কাটায় যার নিশ্চয়তা বিধান করে রাষ্ট্র।
৮. নেতৃত্বে শুধুই দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীনেরা
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট, সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী এহুদ বারাক, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লিকুদ পার্টির সাবেক নেতা অ্যারিয়েল শ্যারনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মুশে কাতসা যৌন কেলেঙ্কারির কারণে কারাভোগ করেছেন। ইসরাইলের প্রায় সব কর্মকর্তাই কোনো-না-কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
৯. আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি ভঙ্গকারী ইসরাইল। ইসরাইলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় মারাত্মক ক্যান্সার-জীবাণুবাহী বোমাবর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা জাতিসঙ্ঘের অস্ত্র আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতির বিরোধী। ফিলিস্তিনের নারী, পুরুষ, শিশুসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন, গণহত্যারও নির্দেশক। জাতিসঙ্ঘও ইসরাইলের অবরোধ আরোপকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
১০. দ্বিমুখী নীতি
মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক বোমার একমাত্র মনোপলি ইসরাইলের। ইসরাইলের ডিমোনা আর হাইফায় নিউকিয়ার কার্যক্রম চলে, ইসরাইলকে বিশাল আকারের সেন্ট্রিফিউজও বানাতে হয়নি। কারণ হাইলি ইনরিচড ইউরেনিয়াম আর প্লুটোনিয়াম তারা আমেরিকার কাছ থেকে সরাসরি পেয়ে থাকে।