ইসলাম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আসিয়া বিবি’র মুক্তির নির্দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বুধবারের রায়ে বলেছে, আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকলে তিনি মুক্ত হয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন।
এ মামলায় বিচারক বলেছেন, বাদিপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ মামলা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
রায় দেয়ার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না আসিয়া বিবি। রায় শোনার পর আসিয়া বিবির আইনজীবী সাইফুল মুলুক বলেছেন, এই রায় আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে পাকিস্তানে দরিদ্র, সংখ্যালঘু ও সমাজের নিচু স্তরের মানুষরাও সুবিচার পায়।
ওই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানজুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলমানরা ইসলামাবাদ, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিসহ দেশটির বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক অবরোধ করতে শুরু করেছে। বাড়ানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা।
ইসলামাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, ফয়জাবাদ থেকে কাশ্মীরের হাইওয়ে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ করে রেখেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেসব অঞ্চল এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। রাজধানীতে আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। করাচিরও বেশিরভাগ এলাকায় বিক্ষোভের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালানোর খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি দলের হুমকির মুখে পাঞ্জাব সরকার সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
ইসলাম অবমাননার দায়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে জেলে আটক রয়েছে আসিয়া। আসিয়া বিবি প্রথম থেকেই নিজেকে স নির্দোষ দাবি করে আসছেন।
২০০৯ সালের জুন মাসে লাহোরের কাছে শেখুপুরা এলাকায় ফল পাড়তে গিয়ে অন্য নারীদের সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে চার সন্তানের জননী আসিয়া ইসলামের নবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আসিয়া একটি কাপ ব্যবহার করে একটি বালতি থেকে পানি খাওয়ার পর, ওই নারীরা পানি অপবিত্র হয়ে গেছে এবং এটি আর ব্যবহার করা যাবে না বললে কথাকাটাকাটি শুরু হয় আসিয়া বিবিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যও চাপ দেয় তারা। এর পাল্টায় আসিয়া ইসলামের নবীকে নিয়ে তিনটি আপত্তিকর কথা বলেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারীরা। পরে আসিয়াকে তার বাড়িতে মারধরও করা হয়; মারধরের একপর্যায়ে আসিয়া ব্লাসফেমির স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন বলেও জানান অভিযোগকারীরা।