জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ে তার সেই দণ্ড দ্বিগুণ করে তাকে এখন ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট।
দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় এখন খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এমন প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেবার যোগ্যতা নির্ধারিত হয় জন প্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী। তাতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবার যোগ্যতা হারাবেন।
তবে রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তি যদি উচ্চ আদালতে আপি করেন, এবং সেই আপিল বিচারাধীন থাকে, সেক্ষেত্রে নির্বাচনে লড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কিনা—তা নিয়ে আইনে কিছু অস্পষ্টতা আছে।
যদিও বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ বলেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে প্রার্থী হবার এবং নির্বাচিত হওয়ার নজির এদেশে রয়েছে।
“যেহেতু তার আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন, দেখার বিষয় হলো সেটা টেকে কিনা। আর তাতে যদি সময় লেগে যায়, তাহলে তিনি তো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন, সে উদাহরণ আমাদের আছে। নব্বই সালে যখন এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল এবং সে প্রেক্ষাপটে তিনি জেলে ছিলেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।”
“আবার কাদের মোল্লার রায়েও নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন দিয়েছিল, কিন্তু উচ্চ আদালতে তার ফাঁসির রায় হয়। অর্থাৎ উচ্চ আদালতে অনেক কিছু রদবদল হতে পারে। ফলে এর মধ্যে উনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না যদি বলা হয়, সেটা চ্যালেঞ্জ করা যাবে।”
তবে মঙ্গলবার হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা দ্বিগুণ করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এর ফলে খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
“দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আমাদের দেশের প্রচলিত আইনের বিধান মতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যে পর্যন্ত এই দণ্ড পরিবর্তন না হয় এবং তিনি খালাস প্রাপ্ত না হন,” বলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের এ বক্তব্যকে ‘পুরোপুরি সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। এবং তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সাধারণত হাইকোর্টের রায়ের পর ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রয়েছে। আপিল বিভাগ যেহেতু এখনো বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে নি, সে কারণে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা এখনো আছে।
কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হবে সময়।
জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে কিন্তু আপিল করা এবং তা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হয়েও যেতে পারে এমন আশংকাও রয়েছে।
সেক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি উনার মনোনয়ন বাতিল করে, তার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট করে উনার প্রার্থিতা যোগ্য ঘোষণার জন্য যে সময় দরকার সেটা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।”
“যেহেতু তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়ে গেছে, আর মনোনয়ন ঘোষণার পর নির্বাচনের আগে সপ্তাহ তিনেকের বেশি সময় হাতে থাকে না, ফলে আমার মনে হয় উনার মামলা হাইকোর্টে চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়া, এবং আপিল বিভাগে অল্প সময়ে সেটা ফয়সালা হবে না, সে বিবেচনায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে হচ্ছে।”
তিনি বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি তার সাজা বাতিল করে দেয়, একমাত্র তাহলেই তার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোন আইনি বাধা থাকবে না।
শেষ পর্যন্ত যদি তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং বিএনপি নির্বাচনে যায়, তাহলে সেটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
গত ৩৪ বছর ধরে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ২৩টি আসনে নির্বাচন করেছেন এবং প্রতিবারই তিনি জয়ী হয়েছেন।