সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে অতিথি পাখির আগমন কমলে কোনভাবেই কমছে না শিকার। প্রতিদিন হাওরে কারেন্ট জালসহ নানা ফাঁদ পেতে পাখি শিকার হলেও অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাংগুয়ার হাওর ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ভারতের মেঘালয় পাহড়ের পাদদেশে অবস্তিত। তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে প্রতি বছর শীত মৌসুমে শীত প্রধান দেশ সূদুর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মৌলভীহাঁস, বালিহাঁস, লেঞ্জা, চোখাচোখি, বেগুনি কালেমসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে আসে এ হাওরে। প্রথমে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও প্রচুর খাবার সমৃদ্ধ হাওরে বিচরন করে তারা যেন সজিবতা ফিরে মাছ শিকার করা, শামুক খাওয়া, জলকেলি আর কিচিরমিচির কলতানে যেন র্স্বগীয় পরিবেশে হাওর পাড়ের মানুষের সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় আর পাখি প্রেমি ও আগত পর্যটকদের সহজেই নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। কিন্তু এবার তার কোন রূপই দেখতে পাচ্ছেন না হাওর পাড়ের বাসীন্দা ও আগত পর্যটকরা।
বিভিন্ন সূত্রে আরো যানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১ হাজার ৮ শত ৫৫ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখির অবস্থান ছিল। এরমধ্যে ৯৮ প্রজাতির পরাযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি ও ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখির বিচরণ করত।
২০১১ সালে টাংগুয়ার হাওরে পাখি শুমারীতে এই হাওরের বিভিন্ন বিলে প্রায় ৬৪ হাজার পাখির অস্থিত পাওয়া যায়। এতে ৮৬ জাতের দেশি ও ৮৩ জাতের বিদেশি রয়েছে। এখন কেবলেই অতিথি বর্তমানের এর সংখ্যা নেই বললেই চলে বলে জানান, পরিবেশ বিদ ও টাংগুয়ার হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে টাংগুয়ার হাওরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করছেন। এছাড়াও এখানকার ব্যবসায়ীরা হাওরে হাঁস ছেড়ে দেওয়ায় পাখির খাবার খেয়ে ফেলায় দিন দিন তাদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে।
হাওরে বেড়াতে আসা সাদেক আলী ও রফিকুল ইসলাম জানান, এক সময় অতিথি পাখির উড়ে যাওয়ার শো শো শব্দ শোনা যেত। এখন আর এ ধরণের শব্দ শোনা যায় না। নানা সমস্যার কারণে পর্যটকদের টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে আসা কমে যাচ্ছে।
মেহেদী হাসান নামে আরেক পর্যটক বলেন, এবারও পাখি নেই বললেই চলে। টাংগুয়ার হাওরে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন কার্যকর, জীববৈচিত্র রক্ষা ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যুগপোযোগী কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিবেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি জানান, হাওরে অবৈধভাবে পাখি ও মৎস্য শিকারিদের বিরোদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা এ ধরণের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তথ্য সংগ্রহ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।