ত্রয়ীর তাণ্ডবে সিরিজ দখল টিম ইন্ডিয়ার

ত্রয়ীর ব্যাটিং তাণ্ডবে চূর্ণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রহিত শর্মার ঝোড়ো ৭১, লোকেশ রাহুলের দুরন্ত ৯১ ও বিরাট কোহলির অধিনায়কোচিত অপরাজিত ৭০ রানের সুবাদে বৃহস্পতিবার তৃতীয় তথা অন্তিম ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের ৬৭ রানে দুরমুশ করে টি-২০ সিরিজ জিতল ‘টিম ইন্ডিয়া’।

বহু ইতিহাসের সাক্ষী ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। ২০১১ সালে এই মাঠেই ধোনির নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। তেমনই তিন বছর আগে এই মাঠেই তো সেমি-ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে দ্বিতীয়বার টি-২০ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন চুরমার হয়েছিল কোটি কোটি ভারতবাসীর। অতীতের এই ঘটনাগুলির সঙ্গে হয়তো বুধবারের ম্যাচের কোনও সম্পর্ক নেই ঠিকই, তবুও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের কাছে হারের পর ক্ষোভে ফুসছিলেন কোহলিরা। তারই বিস্ফোরণ ঘটল ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে।

আট ওভারে ভারতের স্কোর সেঞ্চুরির গণ্ডি টপকে যাওয়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল, কিং কোহলির প্রথম বিবাহবার্ষিকীর রাত আরো রঙিন হতে চলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন কিয়েরন পোলার্ড হয়তো একবারের জন্য ভাবেননি, টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত এভাবে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে।

প্রথম দু’টি ওভার একটু ধরে খেলেন ভারতের দুই ওপেনার রহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। তারপর চার-ছক্কায় রানের রংমশাল জ্বেলে তাঁরা যোগ করেন ১৩৫ রান। গত দু’টি ম্যাচে বড় রান পাওয়ার আক্ষেপ সুদে-আসলে পুষিয়ে নেন রহিত। ২৩ বলে আন্তর্জাতিক টি-২০’তে ১৯তম অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ‘হিটম্যান’। তবে ২৭ রানে এভিন লুইসের হাতে জীবন পান তিনি। পতিদেবের বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখে মেয়ে সামাইরাকে কোলে নিয়ে রহিত জায়া রীতিকাও দর্শকদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।

এই মাঠ বরাবরই লোকেশ রাহুলের পয়মন্ত। এখানে শেষ দু’টি ইনিংসে তিনি ৯০ ও সেঞ্চুরি করেছিলেন। এদিনও ৫৬ বলে ৯১ রান করে লোকেশ বুঝিয়ে দিলেন, টি-২০ বিশ্বকাপে কেন তাঁকে দরকার। রাহুল যখন হাফ-সেঞ্চুরির গোড়ায় দাঁড়িয়ে, তখন রহিত পিছিয়ে থেকে পরপর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। শেষ পর্যন্ত রহিত ৬টি বাউন্ডারি ও ৫টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৭১ রানে আউট হন। মাত্র ন’রানের জন্য শতরান হাতছাড়া করেন লোকেশ। ৯টি ছক্কা ও ৪টি চার মেরেছেন তিনি। ঋষভ পন্থকে (০) তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু ভারতীয় উইকেটরক্ষকটি তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ।

রান-উৎসবকে আরও রঙিন করে তোলেন বিরাট কোহলি। ২১ বলেই পূর্ণ করেন অর্ধশতরান। উইলিয়ামসের সঙ্গে তাঁর ডুয়েল চলতি সিরিজে বাড়তি উন্মাদনার সঞ্চার ঘটিয়েছে। প্রথম ম্যাচে ক্যারিবিয়ান স্পিনারটিকে তুলোধনা করে ‘নোটবুক’ সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন বিরাট। দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে আউট করে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি উইলিয়ামস। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে বিরাটের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় দেখিয়েছে উইলিয়ামসকে। বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলি ফের তাঁকে সবক শিখিয়েছেন। রহিত-রাহুলের মঞ্চে কোহলিয়ানায় মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া। কব্জির মোচড়ে একের পর এক ডেলিভারি তিনি পাঠিয়েছেন বাউন্ডারির বাইরে। ১৯তম ওভারে পোলার্ড দেন ২৭ রান। তার মধ্যে কোহলি তিনটি ছক্কা ও একটি চার হাঁকান। ভারত অধিনায়ক মাত্র ২৯ বলে ৭০ রান করেন ৪টি বাউন্ডারি ও ৭টি ওভার বাউন্ডারির বিনিময়ে।

টিম ইন্ডিয়া ৩ উইকেটে তোলে ২৪০ রান। টি-২০ ক্রিকেটে এটা ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক স্কোর। তখনই বোঝা যায়, ক্যারিবিয়ানদের পরাজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার উপর ওপেনার এভিন লুইস ফিল্ডিং করার সময় চোট পান। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তাই তিনি ব্যাট করতে পারেননি। আস্কিং রেট ১২’র উপর হওয়ায় প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের কাছে। তুলে মারতে গিয়েই পরপর তিন উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ৫ রানে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে আউট হন। সাত রানে লেন্ডন সিমন্ত মাঠ ছাড়েন সামির বলে শ্রেয়াসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আর যাঁকে ক্রিস গেইলের বিকল্প হিসাবে ভাবছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট, সেই নিকোলাস পুরান খাতাই খুলতে পারেননি। দীপক চাহারের বলে বাউন্ডারি লাইনের ধারে তাঁর দুরন্ত ক্যাচ ধরেন শিবম দুবে।

একটা সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৭। সেখান থেকে ক্যাপ্টেন কিয়েরন পোলার্ড ও শিমরন হেটমায়ার মুখরক্ষার লড়াই চালান। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। হেটমায়ার ৪১ রানে আউট হন। পোলার্ড ৬৮ রানে ভুবির বলে জাদেজার হাতে ধরা পড়তেই ড্রেসিং-রুমে বসে কোহলিকে করতালি দিতে দেখা যায়।

Share this post

scroll to top